নিউজবাংলা: শনিবার, ২৭ জুন:

 কক্সবাজার : চলতি সপ্তাহের একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে।

 

কোথাও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এতে লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় যাচ্ছে না পর্যাপ্ত ত্রান সহায়তা। শেষ খবর পর্যন্ত জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার বিকাল থেকে রাতে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম থাকলে শনিবার ভোর রাত থেকে একটানা ভারী বৃষ্টি হতে দেখা গেছে। পানিবন্দি মানুষগুলো ত্রানের জন্য হাহাকার করছে। সবচেয়ে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। জলমগ্ন এলাকাগুলোর টিউবওয়েলগুলো পানিতেই ডুবে আছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে বানের পানি পান করছে। এতে বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলার পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকা অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৮০ ভাগ এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। জেলার লক্ষাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রান্না ঘর জলমগ্ন থাকায় চরম বেকায়দায় পড়ছে রোজাদাররা। অনেকেই শুধুমাত্র পানি খেয়ে রোজা রেখেছেন।

বর্তমানে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলা সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ আট উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় দু’শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে অন্তত ১০ লাখ মানুষকে। অনেক গ্রামীণ সড়কের অস্তিত্ব হুমকীর মুখে।

শুক্রবার কক্সবাজার সদর ও রামুতে পাহাড় ধ্বসে ২ জন পানিতে ডুবে ৫ জন, চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে ১ জন, পেকুয়া উপজেলা সদরের নতুনপাড়া নামক এলাকার আড়াই বছর বয়সের এক শিশু এবং টেকনাফের সেন্টমার্টিনে ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে মা-ছেলেসহ মোট ১১ জন নিহত হয়।

শনিবার সকালে ঢলের পানিতে ডুবে আরো এক জন মারা গেছে। নিহত ব্যক্তি হচ্ছে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ফকির পাড়ার বাসিন্দা বাশঁ ব্যবসায়ী নুরুল আবছার (৪৫)। সে ঢলের পানিতে পড়ে নিহত হয়।

শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় এলাকা বাহারছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড শামলাপুর পুরানপাড়ায় ভয়াবহ পাহাড়ধ্বসের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে নিহত হয়। নিহতরা হলেন বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুরান পাড়ার আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী মাসুদা খাতুন (৪৫), তার কিশোরী মেয়ে শাহিনা আক্তার (১৬)। স্থানীয় এলাকাবাসী লাশ উদ্ধার করে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করে। একই পরিবারের ২জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান মাও: রফিক উদ্দীন, স্থানীয় মেম্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত মোট ১৪জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০জন।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক পানিতে তলিয়ে জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, চকরিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে দেড় শতাধিক চিংড়ি ঘের ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে চকরিয়া-বদরখালী সড়ক।

এদিকে ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে পর্যটন শহর  কক্সবাজার পৌরসভার বৃহত্তর বাজারঘাটা ও উপজেলা গেট প্লাবিত হয়ে সড়ক-উপসড়কগুলো খালে রূপ নিয়েছে। প্রধান সড়কে কোমরসমান পানি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার রাতে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সারা দিনে জেলায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। শনিবার সকাল ৬ থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১৫০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে বুধবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৬৭ মিলিমিটার ও মঙ্গলবার ছিল ৯৯ মিলিমিটার।

জেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ শনিবার রাত পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ নাজমুল।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। সব উপজেলা থেকেই ভয়াবহ ভোগান্তির বার্তা আসছে। পানিবন্দী মানুষগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুুত রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, জরুরি সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসনে খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম।

তিনি আরো জানান, শনিবার থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি দুর্গত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

 

নিউজবাংলা/একে