ঢাকা: সরকারবিরোধী দীর্ঘ টানা আন্দোলন থেকে সরে আসার পর বিএনপিকে নিয়ে অনেক ব্যাপারেই হিসাব মিলছে না।
ভারত ইস্যু থেকে শুরু করে লতিফ-সব ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।তবে জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান কিছুটা নরম হলেও স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রশ্নে কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে আমরা সবাই বিএনপিকে ভারতবিরোধী হিসাবে জানলেও মোদির ঢাকা সফরের সময় তার প্রথম ছন্দপতন ঘটে। হঠাৎ বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জান রিপন বললেন, বিএনপি কখনো ভারতবিরোধী ছিল না এখনো নেই।শেষ পর্যন্ত মোদির সঙ্গে খালেদার বৈঠকের মধ্যদিয়ে তার সমাপ্তি ঘটে।ধর্মীয় ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে দীর্ঘ কারাভোগের পর সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লফিত সিদ্দিকী।
জেলে যাওয়ার আগে ও পরে লতিফ ইস্যুতে বিএনপি ঘন ঘন গরম গরম বক্তৃতা বিবৃতি দিলেও মুক্তির পর দলটি একদম চুপ।
এদিকে হেফাজতসহ অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো আল্টিমেটামসহ নানা ধরনের বক্তৃতা বিবৃতি দিলেও বিএনপি এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না।
এর আগে তো হেফাজত কোনো ইস্যুতে বিবৃতি দিলেই তার প্রতি অকেনটা অন্ধ সমর্থন ঘোষণা করতো বিএনপি।
গত ২৯ জুন বিকালে সাবেক এই মন্ত্রীর মুক্তির পর ইতিমধ্যে হেফাজতসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল তার গ্রেপ্তার দাবি করে কর্মসূচি ঘোষণা করলেও এ নিয়ে নিশ্চুপ বিএনপি।সমর্থন তো দূরের কথা।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ, মহানবী ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিষোদগার করে বক্তব্য দেন। তার এ বক্তব্যে ফুঁসে উঠে তারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তাকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্ক থেকে ভারত হয়ে দেশে এসে গত ২৫ নভেম্বর তিনি ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন বিতর্কিত এই মন্ত্রী। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
এরপর তিনি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং চিকিৎসার নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কাটান। এরই মধ্যে উচ্চ আদালত জামিন মেলে লতিফ সিদ্দিকীর। গত ২৯ জুন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
লতিফ সিদ্দিকীর বিতর্কিত মন্তব্যের পর দেশের ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে বিএনপিও তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। ওই মন্তব্যের একদিন পর ২০ দলের মহাসচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরে বৈঠক নিয়ে ১ আগস্ট সকালে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচিতে ২০ দলের সমর্থন রয়েছে। তবে সরকার তাকে গ্রেপ্তার এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ”
এখানেই শেষ নয়, লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতারা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
এদিকে বিএনপির পাশাপাশি ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামীও বিক্ষোভের কর্মসূচি পালন করেছিল। তবে লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তির পর এই দলটিরও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থি দলগুলো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে। এই ইস্যুতে শুক্রবার মাঠে নামতে পারে ইসলামপন্থিরা।
লতিফ সিদ্দিকী যেদিন জামিনে মুক্তি পান ওইদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শরিক একটি দলের ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি আসেনি।
মঙ্গলবার দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলন করলেও লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
তবে বুধবার এলডিপির ইফতারে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়া লতিফ সিদ্দিকীর জামিন নিয়ে কথা বলেন। অভিযোগ করেন, “জনরোষের ভয়ে জামিন নিয়ে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।”
এ বিষয়ে কথা বলতে আসাদুজ্জামান রিপনের টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলেছেন। আমরা আগেও তার শাস্তি দাবি করেছি। এখনও করছি। হয়তো এ নিয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি, তাই বলে আমরা চুপ করে আছি বিষয়টা তেমন নয়।”
তিনি বলেন, “আশা করি দলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বক্তব্য আসবে।”