নিউজবাংলা: ৪জুলাই, শনিবার:

ঢাকা: রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে! চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে প্রতিকার চেয়ে নবজাতকের বাবা আমিনুল হক বৃহস্পতিবার ভাটারা থানায় মামলা (মামলা নং ৫ ধারা ৩০৪ (ক) দায়ের করেছেন।

শুক্রবার রাতে আমিনুল হক বলেন, আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে জেনেও ওই চিকিৎসক রোগীকে হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করান। আগাম এক লাখ ৫২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করার সময় তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

নবজাতককে হত্যা ও স্ত্রীকে মৃত্যুর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগমকে দায়ী করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ করেছেন বলে জানান তিনি।

ভাটারা থানায় দায়ের করা এজাহারে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে উত্তরা পূর্ব মডেল থানা সেক্টর ৪ রোড ১২ বাসা ২৭ এর বাসিন্দা আমিনুল হকের স্ত্রী রিংকু হক (৩১) গর্ভবতী হলে গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে তাকে বসুন্ধরা অ্যাপোলে হাসপাতালে নিয়মিত চেক করান।

চিকিৎসার ধারাবাহিকতায় গত ১৬ এপ্রিল অ্যাপোলো হাসপাতালে ডা. আয়েশা পারভীন ও ডা. আতিয়া হুদা আলট্রসনোগ্রাম করলে গর্ভজাত শিশুর অবস্থানগত দিক অস্বাভাবিক দেখতে পান। এ বিষয়টি ডা. মনোয়ারাকে জানানো হলেও তিনি বিষয়টি আমলে নেননি।

পরবর্তীতে ১৪ জুলাই নিয়মিত চেকআপের জন্য ডা. মনোয়ারার কাছে গেলে তিনি বলেন, মা ও গর্ভজাত শিশু (৩৪ সপ্তাহ) সুস্থ আছেন। সর্বশেষ ২৮ জুন ডা. দিলরুবা খন্দকার ও আতিয়া হুদা আবার আলট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট দেখে রিংকু হককে জিজ্ঞাসা করেন আগের আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টটি কি গাইনি ডাক্তার দেখেননি। তারা ৩০ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি পরামর্শ লিখে দেন।

এ সময় ডা. মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশু অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, বাচ্চার ফুসফুস অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, এখন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করলে শিশুটি ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাবে।

চিকিৎসকের পরামর্শে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে ৭২০৪ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। এ সময় রিংকু হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও চিকিৎসক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ২৯ জুন ডা. মনোয়ারার তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান হয়। এ সময় রিংকু হক একটি মৃত মেয়ে নবজাতক শিশু প্রসব করেন।

আমিনুল হক বলেন, শুরু থেকেই ডা. মনোয়ারা বেগমের তত্ত্বাবধানে থাকলেও তিনি রোগীর প্রতি উদাসীন ছিলেন। এপ্রিল মাসের আলট্রাসনোগ্রামে সমস্যার কথা জেনেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ২৮ জুন তার পরামর্শে হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অথচ ডিউটি ডাক্তারদের কাছে জানতে পারি গর্ভজাত শিশুর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। ডা. মনোয়ারা বেগমের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। তিনি শিশুটিকে হত্যা তো করেছেনই হাসপাতালে ভর্তি রেখে মায়ের অবস্থার অবনতি ঘটিয়ে আইসিইউতে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা বিল করতে চেয়েছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের জিএম কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ডা. সিমিন এম আখতারের মোবাইল নম্বরে শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় যোগাযোগ করা হলে অনন্যা নামে একজন (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পরিচয়ে) ফোন রিসিভ করে শনিবার যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ম্যাডামের নম্বরটি আমার কাছে রয়েছে। তাই পরে কথা বলতে হবে।

পরবর্তীতে ডিউটি ম্যানেজার ইলিয়াস খান বাদলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জনৈক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে বলেন, এটি ডিউটি ম্যানেজারের নম্বর হলেও তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কাল সকালে কথা বলতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে ডা. মনোয়ারা বেগমের মোবাইল নম্বর জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালের কেউ তা সরবরাহ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

নিউজবাংলা/একে