নিউজবাংলা: ২০জুলাই, সোমবার :
ঢাকা: ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ছেড়ে এক বছর সাত মাস ধরে দেশে নেই তাদের আইনজীবী ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক।

আছেন লন্ডনে। কবে দেশে ফিরবেন বা আদৌ ফিরবেন কি না তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

এরইমধ্যে জামায়াত নেতারা একের পর এক ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছেন। আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আরও পাঁচ শীর্ষ নেতার। তাই আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে এখন দলের ভেতরই নানা প্রশ্ন।

২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে দেশে নেই রাজ্জাক। তার দেশ ছাড়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তার অনুপস্থিতিতেই আরেক জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর চলতি বছরের ১১এপ্রিল।

এবার রায় কার্যকরের পালা দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের। আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা।

শুনানির অপেক্ষায় আছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলা। তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইবুন্যাল।

এই সবগুলো মামলারই প্রধান আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক। তার অনুপস্থিতিতে মামলাগুলো পরিচালনা করছেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী।

রাজ্জাকের দেশে ফেরা নিয়ে জানতে চাইলে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মুনির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কাজ শেষে হলেই তিনি দেশে ফিরবেন। এটিই আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাষ্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান আইনজীবী না থাকলেও মামলা পরিচালনায় সমস্যা নেই। কারণ এখন খন্দকার মাহবুব হোসেন আমাদের সকল মামলা পরিচালনা করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দলের শীর্ষ নেতাদের দুর্দিনে দীর্ঘদিন রাজ্জাক সাহেবের অনুপস্থিতি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর তিনি যে সেই বিদেশ গেলেন আর কোনো খবর নেই। কামারুজ্জামানের ফাঁসি হল তখনও তার কোনো হদিস পাওয়া গেলে না। এখন দলের সেক্রেটারি জেনারেলের ফাঁসির প্রক্রিয়া চলছে। এখনও তার কোনো খবর মেলেনি। দলের এই দুঃসময়েই যদি তাকে পাশে না পাওয়া যায় তবে সুদিনে তার কী দরকার হবে?’।

আবদুর রাজ্জাককে জামায়াত এতোদিন সামনে না নিয়ে এলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তাকেই ধরা হয়। দলের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনিই মূল ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী নেতা হিসেবে তার নাম কখনো সামনে আসেনি, যদিও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতা ছিল তারও।

২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওমরাহ পালনের কথা বলে ঢাকা ছাড়েন জামায়াত নেতা রাজ্জাক। সৌদি আরব না গিয়ে প্রথমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে সৌদি আরব যান। পরে আবার লন্ডন ফিরে যান।

বলা হচ্ছে তাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং করতেই দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। আর দেশের বাইরে থেকেই আইনি এবং দল পরিচালনায় পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

ঢাকা ছাড়ার সময় কলাবাগান থানায় রাজ্জাকের নামে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছিল। আর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় একই অভিযোগে রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার কথাও তখন বলেছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী।

এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদল সিলেটে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এলাকা ঘুরে আসে। মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ২০০৭ সালে সংবাদ সম্মেলন করে যে ১৪ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করেছিলেন, তাতে রাজ্জাকের নামও ছিল।

তাই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করায় জামায়াতের একাংশের মধ্যে এখন প্রবল সন্দেহ যে আন্তর্জাতিক লবিং-এর নামে ব্যারিস্টার রাজ্জাক কি নিজেকে বাঁচাতে দেশ ছাড়লেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত নেতাদের আইনজীবী শিশির মনির জানান, তিনি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত কাজে দেশের বাইরে গেছেন। আর বেশি কিছু আমরা জানি না।’
নিউজবাংলা/একে