নিউজবাংলা: ২০জুলাই, সোমবার :

কক্সবাজার: ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলে দলে পর্যটকরা কক্সবাজারে আগমন করছে। পর্যটকদের উচ্ছ্বাস যেন নব উদ্যমে কক্সবাজারকে রাঙিয়ে তুলেছে। এতে করে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকের পদভারে। দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এখানকার পর্যটন শিল্প। ছোট থেকে বড় কোন হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস-কটেজ কিংবা ফ্ল্যাটে তিল ধারণের জায়গা নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত ইতোমধ্যে অনেক হোটেলের রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও হরতাল-অবরোধ না থাকায় কোটি টাকার বাণিজ্যিক লেনদেন হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এখানকার সকল স্তরের ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছরের সকল ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভের মুখ দেখার অপেক্ষায় পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে মোটা অংকের বিনিয়োগ করা ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যিক লেনদেন হওয়ায় হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস, বার্মিজ মার্কেট থেকে শুরু করে ডিম, আচার বিক্রেতাসহ খুশিতে আত্মহারা সকল স্তরের ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের পেয়ে খুশির ভাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না বাস-মিনিবাস-রিকশা-টমটম, সিএনজি থেকে শুরু করে পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগকারীরাও। ঈদুল ফিতরের ছুটি ও পরবর্তীতে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ায় আনন্দের দিনগুলোকে স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পাড়ি জমিয়েছে লাখো পর্যটক।

বীচপার্ক মার্কেট মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল অবস্থার কারণে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ব্যবসায়ীরা সুন্দর মতো ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। ফলে স্বস্তিতে দিন কাটাতে পারছে ব্যবসায়ীরা। শহরের বার্মিজ মার্কেটের পানের দোকানদার বাচ্ছু জানান, দীর্ঘদিন পর পর্যটকের মুখ দেখায় তার পানের দোকানে দৈনিক আগে যেখানে কয়েক’শ টাকা বিক্রি হতো সেখানে বর্তমানে কয়েক হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে।

শহরের পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন খুরু স্কুলের রিকশা চালক রহিম মিয়া বলেন, পর্যটকের আগমনকে কেন্দ্র করে রামুতে রিকশা না চালিয়ে কক্সবাজার শহরে চলে এসেছি। এখন পর্যটকদের বহন করে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে দিন যাপন করছি। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবার বিপুল পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজারে। পর্যটকদের আগমনে অতীতের লোকসান পুষিয়ে এখন আমরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছি। পর্যটকদের আগমনে লাভের মুখে রয়েছে পরিবহন সেক্টরও।

এস.আলম কক্সবাজারস্থ ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন জানান, ঈদের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অতিরিক্ত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য পরিবহনগুলো বিশেষ সুবিধাও প্রদান করে যাচ্ছে।

কক্সবাজার ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি কাসিম আলী জানান, পর্যটকদের আগমনে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের সঙ্গে জড়িত পর্যটন নির্ভর কয়েক হাজার পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

এদিকে পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকরা যাতে কোন ধরনের ছিনতাই কিংবা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলো। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সীমাবদ্ধ না থেকে ইনানী পাথুরে বীচ, হিমছড়ির অপরুপ ঝর্ণা, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, দরিয়ানগর, রামুর নব-নির্মিত বৌদ্ধ বিহার, আদিনাথ মন্দিরের অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে পর্যটকরা।

নিউজবাংলা/একে