নিউজবাংলা: ২৩জুলাই, বৃহ.বার :
দল ভাঙা নিয়ে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে দোষারোপের রাজনীতির মধ্যে পেশাজীবী ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, দলটির সময় খুব খারাপ যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারা বলছেন বিএনপির ভাঙ্গন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা নেই। বিএনপির ভুল রাজনীতির কারণেই ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, বিএনপির এখন খুব খারাপ অবস্থা চলছে। তিনি মনে করছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারে দলটি। তবে তারেক রহমান সহসা দেশে আসতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সন্দিহান তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশংকা বিএনপি ভাঙলে দেশের রাজনীতিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অনেকের মতে, বিএনপিতে সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না। তাই বিএনপি ভাঙার জন্য ‘ঘরের শত্র“ বিভীষণ’রা সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজানো হবে। এতে দলে ভাঙ্গনের আশঙ্কা ঠেকানো যাবে।
তবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খোদ খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, বিএনপিকে শেষ করতে চায় সরকার। তার বিশ্বাস, বিএনপি জনগণের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীরা বাসায় দেখা করতে গেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল বিএনপি। অতীতে বিএনপি ভাঙ্গা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বিএনপি সব ঝুঁকি সামলে নিয়েছে। দল ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে।
এদিকে সরকারের প্রতি দোষারোপ করে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, কারা ভাঙছে, কারা ভাঙতে চাইছে তাদের আমরা চিনি না। বিএনপি ভাঙার চেষ্টার কোনো তথ্য তার কাছে নেই। কে বা কারা এটি করছেন তাও তার জানা নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চায় গণতান্ত্রিক পরিবেশে সব দল রাজনীতি করুক।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করবে কেন?
বিএনপি ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার কোনো চেষ্টা করছে না।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রত্যাখান করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের এ মুহূর্তে কোনো দলকে ভাঙার গরজ নেই। বিএনপি যদি কখনো ভাঙে বা দলটিতে ভাঙনের সুর বাজে সেটির জন্য দলের নেতাদের অন্তকলহই দায়ী।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সব সরকারই বিরোধী দল ভাঙার চেষ্টা করে। তবে বিএনপি ভাঙার জন্য সরকারের প্রয়োজন হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, বিএনপি ভাঙা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক বক্তব্য। এগুলো আমি গায়ে মাখতে চাই না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্দোলনে নামাই এখন বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ। দল পুনর্গঠন করতে গিয়েও দলটিকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তবে সামনে এগোতে হলে এখনই তাদের অতীতের ভুলগুলো শোধরাতে হবে। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্বাচিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নিউজবাংলা/একে