নিউজবাংলা: ২৯জুলাই : বুধবার:
আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি
সিলেটের বিশ্বনাথে পূর্ব বিরোধ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তা নির্মাণ ও আরসিসি রাস্তা খুড়ে লোকদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, থানা পুলিশ এক পক্ষের মামলা রেকর্ড করলেও অপর পক্ষের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় তারা সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি.আর মামলা দায়ের করেছেন এবং উক্ত অভিযোগটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে এফ.আই.আর করে তাৎক্ষনিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে ৩০ জুলাইর মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশ্বনাথ থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার শাহজিরগাঁও গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুন নুর এর বাড়িতে গ্রামের মসজিদের জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে শাহজিরগাঁও গ্রামের রফিক আলী ও মানিক মিয়ার লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় মানিক মিয়াসহ তাদের পক্ষের আহত হন দুদু মিয়া, সোনাফর আলী, রুপ আলী। রফিক মিয়াসহ তাদের পক্ষে আহত হন কুদ্দুছ আলী, চান্দ আলী, আকলিছ আলী, জামাল মিয়া। এঘটনায় গত সোমবার বিশ্বনাথ থানায় মানিক মিয়ার পক্ষে সোনাফর আলীর পুত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ফয়জুল ইসলাম জয় বাদি হয়ে প্রতিপক্ষের ১৩জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ২০।
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, বিবাদী রফিক মিয়া বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেন। গত শনিবার রাতে প্রবাসী আব্দুন নুরের বাড়ি মসজিদের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েতে বৈঠকে জগন্নাথপুরের গড়গড়ি গ্রামের ফজলুর রহমান, বিশ্বনাথের কাসিবপুর গ্রামের রুহেল খান ও ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজরের রাহিম আহমদ উপস্থিত হয়ে রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। এনিয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন কথাবার্তা শুরু করলে রফিক মিয়াসহ অভিযুক্তরা গ্রামের মুরব্বিদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা করেন।
এদিকে, এঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ মানিক মিয়াসহ প্রতিপক্ষের ৯জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৭/৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি সি.আর মামলা দায়ের করেছেন (২০৪/২০১৫)। দায়েরকৃত অভিযোগটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে এফ.আই.আর করে তাৎক্ষনিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে আগামী ৩০ জুলাইর মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশ্বনাথ থানার ওসি রুফিকুল হোসেনকে নির্দেশ প্রদান করেছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নাজমুল হোসেন চৌধুরী।
মামলা এজাহারে বাদি রফিক মিয়া উল্লেখ করেন, গ্রামের মসজিদের জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে মসজিদের মূল্যবান জমি বিনিময়ের প্রস্তাব করেন আব্দুল লতিফের পুত্র জামাল মিয়া। এতে আসামী মানিক মিয়া ও দুদু মিয়া সম্মতি জানান এবং বাদি রফিক মিয়া অসম্মতি জানালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মানিক মিয়া গংরা বাদি পক্ষের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ঘটনার পরদিন রবিবার অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাদির বাড়িতে হামালা চালায় এবং তার (রফিক) গোয়াল ঘরে থেকে ৪/৫টি গরু অভিযুক্তরা নিয়ে যায় এবং ঘটনার দিন ও পরদিন রাতে আসামীরা বাড়িতে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি করে ঘরের দরজা-জানালা ভাংচুর করে গৃহস্থালী কাজের লোকদের হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বিতারিত করে। আসামীদের বয়ে বাড়িঘরে মহিলারাও নিরাপদে থাকতে পারছেন না।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বাদি আরো উল্লেখ করেন, এসব বিষয়ে তার মা সুফিয়া খাতুন বিশ্বনাথ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের গেলে থানা ওসি রফিকুল হোসেন তাকে (সফিয়া) গালমন্দ করে থানা থেকে বিদায় করেন দেন। আসামি মানিক মিয়া কয়েক মাস পূর্বে ওসি রফিকুল হোসেনের নিকট আত্মীয় জনৈক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। এতে আসামিদের অপকর্মের বিরুদ্ধে থানায় কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে লিখিত অভিযোগে বাদি উল্লেখ করেন।
এছাড়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তার বাড়ির একমাত্র নিজস্ব রাস্তার উপর দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং আর.সি.সি করা রাস্তাটি খুড়ে ফেলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীগণ ঘটনাস্থলে গেলে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এব্যাপারে মানিক মিয়া বলেন, আমাদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় আমরা থানায় মামলা দায়ের করেছি। রফিক মিয়ার বাড়ির রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া ও রাস্তা খুড়ে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমাদের জায়গা। তাই আমারা দেয়াল নির্মাণ করেছি ও ডালাই উপড়ে ফেলছি।

নিউজবাংলা/একে