নিউজবাংলা: ২৯জুলাই : বুধবার:
ঢাকা: বাকিরা গেল কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন তোলপাড় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।
গত সপ্তাহেই দশ জন জঙ্গির একটি দল নাশকতা ঘটাতে ভারতে ঢুকতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিল কেন্দ্র।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, সেই দলের তিন জন গত কাল গুরদাসপুরের সংঘর্ষে মারা গিয়েছে। কিন্তু দলের বাকি সদস্যেরা কোথায় লুকিয়ে থেকে নতুন হামলার ছক কষছে, তা জানতে এখন দিনরাত এক করে ফেলছেন গোয়েন্দারা। বাকিদের খোঁজে গোটা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে জারি হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, স্বাধীনতা দিবসের আগে অন্তত একটি বা দু’টি বড় মাপের হামলা চালাতে পারে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। এবং এই দলটির বাকি সাত সদস্যই সেই হামলায় যুক্ত থাকতে পারে বলেও অনুমান গোয়েন্দাদের। সে কারণেই বাকি জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
এরই মধ্যে কেন্দ্রের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে কাশ্মীর থেকে নতুন অনুপ্রবেশের তথ্য এসেছে নর্থ ব্লকের কাছে। রিপোর্টে এক দিকে কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে ফের জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অন্য দিকে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, শিয়ালকোট থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সীমানা বরাবর প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জঙ্গি ভারতে ঢোকার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। যাদের পূর্ণ মদত দিচ্ছে পাক সেনা।
কাশ্মীর বরাবরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু চলতি হামলায় যে ভাবে পঞ্জাবের গুরদাসপুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। প্রথমত, কেন্দ্র মনে করছে, পঞ্জাবের মাটিতে ফের জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটিয়ে খলিস্তানি আন্দোলনকে হাওয়া দিতে চাইছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ওই হামলার মাধ্যমে খলিস্তানি জঙ্গিদের এই বার্তা দেওয়া যে, চাইলে পঞ্জাবে নতুন করে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটনো অসম্ভব নয়। গত কালের হামলার ঘটনায় এখনও সরাসরি খলিস্তানি যোগ না পেলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে এক জঙ্গি পঞ্জাবি ভাষায় কথা বলছিল।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত কাল জঙ্গিরা যে ভাবে গোটা অপারেশনটি চালিয়েছে, তাতে লস্কর-যোগ স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশ্লেষণ, এই উপমহাদেশে একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বিভ্রান্ত করে দেওয়ার এই যে কৌশল, এটা লস্করের ‘ট্রেডমার্ক’। মুম্বই হামলার সময়েও ওই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে লস্করের মাথারা যে মুম্বই হামলা থেকে শিক্ষা নিয়েছে, তা-ও বুঝতে পারছেন গোয়েন্দারা। এই জঙ্গিদের পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা যে করা হয়েছে, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট গোয়েন্দা-কর্তাদের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের কথায়, ‘‘জঙ্গিদের বন্দুকগুলি কোথায় তৈরি, তা ঘষে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের পোশাক কোথায় বানানো হয়েছে, সেই স্টিকার বা ট্যাগও রাখা হয়নি। যা মুম্বই হামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা গিয়েছে। এমনকী গতকাল জঙ্গিদের দেহের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের শরীরের সমস্ত লোমও কামিয়ে ফেলা হয়েছিল। এই প্রবণতা আত্মঘাতী জঙ্গিদের মধ্যে খুব দেখা যায়। তা ছাড়া নিজেদের পরিচয় লুকনোর জন্যও জঙ্গিরা ওই কাজ করে থাকে।’’
দ্বিতীয়ত গুরদাসপুরের অবস্থান। গুরদাসপুর থেকে পাকিস্তান সীমান্ত মাত্র দশ কিলোমিটার। গোয়েন্দাদের কাছে চিন্তার বিষয় হল, গুরদাসপুরের উপর দিয়ে গিয়েছে ১৫ নম্বর জাতীয় সড়ক। যার উত্তরে পাঠানকোট আর একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে গুজরাতের কচ্ছ। গোয়েন্দরা মনে করছেন, জঙ্গিদের একবার গুরদাসপুরে পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হল ১৫২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কাশ্মীর থেকে গুজরাত পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় তারা ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের আটকানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
গত কাল জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া দু’টি জিপিএস ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পঞ্জাব থেকে দিল্লি পাঠানো হয়েছে। ওই জিপিএসগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করে এখন জঙ্গিদের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। বিশেষ করে ওই জঙ্গিদের যাত্রা শুরু হয়েছে কোথা থেকে, আর তা শেষ হওয়ার কথা ছিল কোথায়। গোয়েন্দারা আশা করছেন, তথ্য বিশ্লেষণেই স্পষ্ট হবে ওই জঙ্গিরা কোন পথে ভারতে এসেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাদের গন্তব্য কোথায় ছিল? গুরদাসপুর না অন্য কোনও জায়গা।
জিপিএস বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের বক্তব্য, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নির্দেশে ওই জঙ্গিরা প্রথমে পাকিস্তানের শকরগড় এলাকায় এসে জড়ো হয়। যার উল্টো দিকেই পঞ্জাব সীমান্ত। রবিবার বেশি রাতে ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তাদের শেষ ঠিকানা ছিল শকরগড়ের ঘারোট গ্রাম। ঘারোট থেকে ইরাবতী নদী পার হয়ে পঞ্জাবের পাঠানকোটের বামিয়াল এলাকা দিয়ে ওই জঙ্গিরা ভারতে ঢুকেছে বলেই প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। বামিয়াল থেকে অমৃতসর-জম্মু সড়ক ধরে দীনানগরের দিকে এগোয় তারা।
জম্মু ও পঞ্জাব সীমান্তের কাছাকাছি বামিয়াল কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বামিয়াল থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় গুরদাসপুর, পাঠানকোট ও জম্মুর কাঠুয়া এলাকায়। সাম্বার মতো উপদ্রুত এলাকায় সড়ক পথে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তার কারণে বামিয়ালকে এখন জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশের ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কিনা, তা-ও এখন গোয়েন্দাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন।

নিউজবাংলা/একে