নিউজবাংলা: ১১ আগস্ট, মঙ্গলবার:

 

নিউজবাংলা ডেস্ক: চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের অনেক অঞ্চলেই ভালো বাজার রয়েছে এহসান স্টিলের (ইএসআরএম) ৬০ গ্রেডের রডের। প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন ইএসআরএম ব্র্যান্ডের রড বিক্রি হয় বলেও দাবি কোম্পানি-সংশ্লিষ্টদের।

 

ডিলার-এজেন্টদের অভিযোগ, এহসান স্টিলের রডে ৬০ গ্রেড ও ৫০০ ওয়াট সিল লাগানো থাকলেও এটি আসলে সাধারণ গ্রেডের। এহসান স্টিলের এমএস রডের মান সন্তোষজনক নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রতিবেদনেও। সংস্থাটি বলছে, বিএসটিআই থেকে সিএম লাইসেন্স না নিয়েই রড উৎপাদন ও বিপণন করছে প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে সিএম লাইসেন্স ছাড়াই রড উৎপাদন করছে চট্টগ্রামের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।

সনাতনী (ম্যানুয়াল) ও স্বয়ংক্রিয় (অটো) পদ্ধতিতে চট্টগ্রামে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬৫টির মতো। বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্যমতে, এর মধ্যে মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বৈধ সিএম লাইসেন্স রয়েছে। বাকি অর্ধশত প্রতিষ্ঠানই সিএম লাইসেন্স ছাড়া রড উৎপাদন ও বিপণন করছে। ৬০ গ্রেডের সিল লাগিয়ে এসব রড বিক্রি করা হচ্ছে।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কেএম হানিফ বলেন, গত বছর সার্ভিলেন্স টিমের অভিযানের পর ইএসআরএমের ৬০ গ্রেডের রডের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবেদনে ইএসআরএমের রডের মান খারাপ পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসটিআই লাইসেন্স না নিয়েই ৬০ গ্রেডের রডের বাজারে ব্যবসা করছে বলাকা স্টিল, বেনস স্টিল, আল ছাপা স্টিল, পেনিনসুলা স্টিল ও মানতি স্টিলের মতো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বলাকা স্টিল প্রতিদিন গড়ে ১০০ টন, বেনস স্টিল ১০০, আল ছাপা ৮০-৯০, পেনিনসুলা ৮০-১০০ ও মানতি স্টিল ৮০-১০০ টন রড উৎপাদন ও বাজারজাত করছে।

বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, বাজারে এমন অনেক কোম্পানি আছে, যাদের রড কোনো গ্রেডে পড়ে না। সাধারণ রডের গায়ে ৬০ গ্রেডের সিল লাগিয়ে বাজারজাত করছে তারা। অনুমোদনহীন এসব কোম্পানির মানহীন রডের দাম কম হওয়ায় বাজারে বিক্রিও ভালো। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএসটিআই যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় এ প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো মানের ৬০ গ্রেডের প্রতি টন এমএস রড বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ হাজার টাকায়। আর নিম্নমানের ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৪৫-৫০ হাজার টাকায়। নিম্নমানের হলেও প্রতিটি কোম্পানির রডে ৬০ গ্রেড ও ৫০০ ওয়াটের সিল থাকায় ভালো-খারাপ যাচাইয়ে সুযোগ থাকছে না ক্রেতাদের।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, সাধারণ ও গ্রেডের সব ধরনের রড উৎপাদনে বিএসটিআই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু চট্টগ্রামের রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই লাইসেন্স না নিয়ে পণ্যটি উৎপাদন করছে। বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মামলা করা হয়েছে। তার পরও অবৈধভাবে রড উৎপাদন করে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিএসটিআইয়ের লোকবল সংকটসহ নানা কারণে ইচ্ছা থাকার পরও অনেক সময় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নিম্নমানের রড ব্যবহারের কারণে স্থাপনার ঝুঁকিও বাড়ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ সরওয়ার আহমেদ বলেন, প্রকৌশলীরা একটি ভবন নির্মাণে মাটির গুণাগুণ, পরিবেশ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে রডের ধারণক্ষমতা (লোড ক্যালকুলেশন) হিসাব করেন। ভবন মালিকরা যদি শুধু সিল দেখে বাজার থেকে নিম্নমানের রড কেনেন, তাহলে ভবনের ঝুঁকি বাড়বেই।

 

নিউজবাংলা/একে