যে আলামত দেখে বোঝা যাবে মৃত ব্যক্তির শেষ পরিণতি…
নিউজবাংলা: ১৪আগস্ট,শুক্রবার:
ঢাকা: শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার কিছু আলামত রয়েছে। কিছু আলামত এমন যা মৃত্যুকালে মুমিন ব্যক্তি নিজে অনুভব করে, মানুষের কাছে প্রকাশ পায় না, আর কিছু আছে যা মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।
যে আলামতগুলো বান্দা নিজে মৃত্যুকালে উপলদ্ধি করে তা হল, মুত্যুকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ, তাঁর অনুগ্রহ, যার সুসংবাদ ফিরিশ্তারা নিয়ে আসে।
ভাল পরিনতি সম্পর্কে এ কথা হাদিসে এসেছে, সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ কোন মানুষের কল্যাণ করতে চান তখন তাকে সুযোগ করে দেন।” সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কিভাবে সুযোগ করে দেন ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকাজ করার সামর্থ দান করেন।’
শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার কিছু আলামত রয়েছে। কিছু আলামত এমন যা মৃত্যুকালে মুমিন ব্যক্তি নিজে অনুভব করে, মানুষের কাছে প্রকাশ পায় না, আর কিছু আছে যা মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।
যে আলামতগুলো বান্দা নিজে মৃত্যুকালে উপলদ্ধি করে তা হল, মুত্যুকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ, তাঁর অনুগ্রহ, যার সুসংবাদ ফিরিশ্তারা নিয়ে আসে।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। ‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।’ এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ ফিরিশ্তারা এ সুসংবাদ যেমন মৃত্যুকালে দেয় তেমনি কবরে অবস্থানকালে দেয় এবং কবর থেকে পুনরুত্থানের সময়ও দেবে।
হাদিসে এর বর্ণনা এসেছে, আয়েশা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে নবী ! সাক্ষাতকে অপছন্দ করার অর্থ কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরাতো সকলেই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি! তিনি বললেন : ‘ব্যাপারটা আসলে এমন নয়।
মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসতে থাকে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসেন। আর যখন আল্লাহর অবাধ্য মানুষকে আল্লাহর শাস্তি ও তার ক্রোধের খবর দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। এ হাদিসে মৃত্যুকে পছন্দ আর অপছন্দ করার যে কথা বলা হয়েছে তা হল মৃত্যু যখন উপস্থিত হয়ে যায় ও তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখনকার সময়। মৃত্যু উপস্থিত হলে মুমিন ব্যক্তি সুসংবাদ পেয়ে মৃত্যুকে ভালবাসে আর আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি তখন মৃত্যুকে ঘৃণা করে।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসার প্রমাণ হল পরকালকে সর্বদা পার্থিব জীবনের উপর প্রাধান্য দেবে। দুনিয়াতে চিরদিন অবস্থান করার আশা করবে না বরং পরকালীন জীবনের জন্য সৎকর্মের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকবে। আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করার বিষয়টি হল ঠিক এর বিপরীত। অর্থাৎ তারা দুনিয়ার জীবনকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে না। এদের তিরস্কার করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতে পরিতৃপ্ত থাকে . . .।
আর মৃত্যুকালে ভাল পরিণতির যে সকল আলামত মানুষের কাছে প্রকাশিত হয় তার সংখ্যা অনেক। কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল :
(১) নেক আমল করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে, ‘আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই’ এবং এ কথার সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওম পালন করবে এবং এ কাজের সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছদকাহ করবে এবং এর সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
(২) মৃত্যৃকালে কালেমার স্বাক্ষ্য দেয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার শেষ কথা হবে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(৩) আল্লাহর পথে সীমান্ত পাহাড়ারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহাড়া দেয়া এক মাস ধরে সিয়াম পালন ও একমাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশী কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচিছল মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক জারী থাকবে, কবর-হাশরের ফিৎনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
(৪) কপালে ঘাম নিয়ে মৃত্যু বরণ করা।
মৃত্যুর সময় মৃত্যু ব্যক্তির কপালে ঘাম দেখা দিলে বুঝতে হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমানদারের মৃত্যু হল কপালের ঘামের সাথে।’ অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুকালে কপালে ঘাম দেখা যাবে ধরে নেয়া হবে তার ভাল মৃত্যু হয়েছে।
(৫) শুক্রবার দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলিম শুক্রবার দিবসে অথবা রাতে ইন্তেকাল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ শুক্রবার রাত বলতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়ে থাকে।
(৬) এমনভাবে মৃত্যুবরণ করা যাকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয় :
এ রকম মৃত্যু কয়েক প্রকারে হয়ে থাকে যা নিম্নে তুলে ধরা হল:‘শহীদ পাঁচ প্রকার : প্লেগে মৃত্যু বরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যু বরণকারী, ডুবে মৃত্যু বরণকারী, চাপা পড়ে মৃত্যু বরণকারী ও আল্লাহর পথে যুদ্ধে মৃত্যু বরণকারী।
নিউজবাংলা/একে