নিউজবাংলা: শুক্রবার, ২৬ জুন:

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের এক শিক্ষক নিজ বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মহিলা পরিষদে অভিযোগ দিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। তবে তার অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছেন।

অপরদিকে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ।  তারা বলছেন, মেধাবী শিক্ষককে বেকায়দায় ফেলার জন্য মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক ধর্ষণ মামলা দেয়া হয়েছে।  মেয়েটির তিন জায়গার অভিযোগের ভাষ্য একই রকম নয়।  অসংলগ্ন মনগড়া অভিযোগ করছে ওই ছাত্রী।  শুক্রবার সকালে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের একাংশ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ : পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আল হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে একই বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী।  গত ১৯ জুন কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, পড়াশুনার সুবাদে তিনি শহরের পালবাড়ি এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন।  বছর দুয়েক আগে থেকে শিক্ষক তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।  এর সূত্র ধরে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন।  সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ধর্ষণ করেন।  কিন্তু বিয়ের প্রলোভন দেখালেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষক তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি।  তাই বাধ্য হয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।  এর আগে গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী।  তার অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল কবির জাহিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।  কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।  এছাড়াও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যশোর শাখাও অভিযোগ দেয় ওই সময়।  কিন্তু এরপরও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় গত ১৯ জুন কোতোয়ালি থানায় ওই ছাত্রী মামলা করেছেন।  মামলার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।  এরপর ২০ জুন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থীর সংবাদ সম্মেলন : শুক্রবার সকালে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ ওই শিক্ষককে নির্দোষ দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আল হাসানকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে ওই ছাত্রী কিছু দিন পর পর অসংলগ্ন, অশ্লীল, চরম নাটকীয়তাপূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন।  ওই ছাত্রী গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে ১৯ জুন দায়ের করা মামলার কোনো মিল নেই।  মামলায় ধর্ষণের কথা বললেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেননি।  আবার গণমাধ্যমে দেয়া অভিযোগে বলেছেন, ওই শিক্ষক একাধিক স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করেছেন।  কিন্তু মামলায় উল্লেখ করেছেন শুধু শহরের পালবাড়ি এলাকার ভাড়া বাসায় ওই শিক্ষক তাকে ধর্ষণ করেছে।  তার অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যে প্রমাণিত তিনি কারো দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে শিক্ষকের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাস্টার্সের ছাত্র নাসিরুদ্দিন বাদল।  এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মেহেদী হাসান, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ রায়হান, মাসুম বিল্লাহ, মমিনুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিনসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।  পরে প্রেসক্লাবের সামনে তারা মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন।

তবে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সৈয়দ মাহফুজ আল হাসান বাঁচার জন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।  তিনি খুব শিগগির বরখাস্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় শেষ চেষ্টা করছেন।  শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানো ও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও থানায় একই অভিযোগ করেছি।  সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।  আমাকে কোনোভাবে দমানো যাবে না।

মেডিকেল রিপোর্ট ও তদন্ত কমিটি : গত ১৯ জুন কোতোয়ালি থানায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ওই ছাত্রী।  মামলা নম্বর ৮৭।  মামলার পর ২০ জুন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।  মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

গত ১০ মার্চ ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।  মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল কবির জাহিদকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রায় চার মাসেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দিতে পারেনি।  কবে নাগাদ রিপোর্ট দেয়া হবে সেটিও নিশ্চিত নয়।  তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে খুব শিগগির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিবে।

একাধিক শিক্ষক জানান, ঘটনাটি স্পর্শকাতর।  হ্যাঁ না কিছু বলা যাচ্ছে না।  সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।  শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় খুললে জানা যাবে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নিউজবাংলা/একে