নিউজবাংলা: শুক্রবার, ২৬ জুন:
ঢাকা: চলতি মাসের শুরুতে অর্থাৎ রমজান শুরুর সপ্তাহ খানেক আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হতো ৩২০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকায়। আর রোজা শুরুর এক সপ্তাহ পর শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি জিরার দর ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়।

সে সময় প্রতিকেজি এলাচির দর ছিল ১১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। আজ রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকায়। অর্থাৎ কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি এলাচের দর বেড়েছে সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
রাজধানীর মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, কাপ্তান বাজার এলাকায় ঘুরে এমনটিই জানা গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, রমজান মাসের মাত্র এক সপ্তাহ পার হয়েছে। রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে মসলার বাজার এক দফা বেড়েছে। রোজা শুরুর পর তার প্রভাব বাজারে পড়েছে। দিন যতই যাচ্ছে ঈদের দিন ততই ঘনিয়ে আসছে। আর এই ঈদকে সামনে রেখে মসলার বাজার আরও এক দফা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে প্রাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে নয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মসলার বাজার উঠানামা করছে। ঈদের সময় বাজারের প্রতি সকলের নজর থাকে বলে বোঝা যায় মসলার বাজার দর বাড়ছে।
শুক্রবার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি জিরা ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় (পূর্বের দর ৩২০), তেজপাতা ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় (পূর্বের দর ১৮০ টাকা), দারুচিনি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় (পূর্বের দর ২২০ টাকা), লবঙ্গ ১২৮০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা (পূর্বের দর ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা), এলাচি ১৬৫০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকায় (পূর্বের দর ১২০০ টাকা), কালো গোল মরিচ ১ হাজার টাকা থেকে ১১০০ টাকায় (পূর্বের দর ৮৫০ টাকা), জয়ফল ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা (পূর্বের দর ৬০০ টাকা), যত্রীক ১৫৫০ থেকে ১৫৮০ টাকায় (পূর্বের দর ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা), কিসমিস ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় (পূর্বের দর ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা), আলু বাখারা ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় (পূর্বের দর ৩২০), কাঠবাদাম ৯৫০ টাকা থেকে ৯৮০ টাকায় (পূর্বের দর ৮৫০ টাকা থেকে ৮৮০ টাকা), পোস্তাদানা ৬৫০ টাকা থেকে ৬৮০ টাকায়, সাদা গোল মরিচ ১৪৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকায় (পূর্বে ১৩০০ টাকায়) বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি ইসুবগুল ৭৮০ টাকায় (পূর্বের মূল্য ৫৭০ টাকায়), খোরমা খেজুর ১৩০ টাকায় (পূর্বের দর ১১০ টাকা), কালো এলাচ ২৮০০ টাকায় (যার পূর্বের মূল্য ছিল ২২০০ টাকা), সাদা সরিষা ৬০ টাকা, লাল সরিষা ৫৫ টাকায় (পূর্বের মূল্য ছিল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা), মেথি ১৮০ টাকা (পূর্বে ছিল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা), হলুদ গুড়া ২৫০ টাকা (পূর্বে ছিল ১৮০ টাকা), মরিচ গুড়া ৩০০ টাকায় (পূর্বে ছিল ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা) বেচাকেনা হতে দেখা গেছে।
তবে সব মসলার দর বেড়েছে এমনটি নয়। কিছু মসলার দর আগের চেয়ে কমেছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা পেস্তা বাদাম প্রতিকেজি ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হতো ১৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। শাহি জিরার দাম আগের চেয়ে কমে প্রতিকেজি ৬৭০ টাকা বিক্রি হলেও কালো জিরার দাম আগের চেয়ে বেড়ে প্রতিকেজি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রতি কেজি কালো জিরা বিক্রি হতো ১২০ টাকায়। তবে ধনিয়ার দর আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। শুক্রবার বাজারে প্রতিকেজি ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যার পূর্ব মূল্য ছিল ২২০ টাকা।
এদিকে বাজারে প্রতিকেজি চীনা বাদাম ৮৫ টাকায়, তোকমা দানা ৭০ টাকা ৮০ টাকায়, তালমাখনা ৩২০ টাকা (পূর্বে ছিল ১৬০ টাকা), পাঁচপোড়ন ৩০০ টাকায়, তুর্কি জিরা ৫৬০ টাকায়, রাধুনি ঘি ৭২০ টাকায়, বাঘাবাড়ী ঘি ৭৬০ টাকায়, মিল্ক ভিটার ঘি ৮৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে একাধিক ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, রমজানের আগে থেকে সরকারের মন্ত্রীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেছে বাজার মনিটরিং করা হবে, পণ্যের দর বাড়বে না। কিন্তু মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেই মনিটরিং কমিটি। যদি বাজারে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতো তাহলে মসলার দর এতো বাড়তো না বলে মনে করছেন তারা।
কাপ্তান বাজারে মসলার খুচরা ক্রেতা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মনির হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, রমজানে মনিটরিং করবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ রমজানের আগেই ব্যবসায়ীরা এক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে রেখেছে। আর রোজায় চড়া দামে মসলাসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারের শরীয়তপুর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ও মসলার খুচরা ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রাইকারি বাজারে দর বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে মসলার দর কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকে মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ঈদকে সামনে রেখে মসলার দর আরেক দফা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েতুল্লাহ বলেন, আসলে মসলার দর ওঠা নামা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মসলার দর বাড়ে কমে। এগুলোর দর বছরের বেশির ভাগ সময় উঠানামা করে। তবে রোজায় বাজারের উপর মনিটরিং কিংবা নজর বেশি থাকে তাই মসলার দর অনেকটা বেড়েছে বলে মনে করে অনেকে। তবে বর্তমান বাজারে কিছু পণ্যের দর বাড়লেও আবার অনেক পন্যের দর কমেছে।

নিউজবাংলা/একে