টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা
নিউজবাংলা: শনিবার, ২৭ জুন:
ঢাকা: কার্লোস তেভেজের শটটি জালে জড়িয়ে যেতেই বাধভাঙা উল্লাস। মাথার ওপর চেপে বসা বিশাল এক পাথর সরে যাওয়ার যে আনন্দ সেটা যেন শিরোপা জয়ের মুহূর্তটিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মত।
নির্দিষ্ট ৯০ মিনিটের পর টাইব্রেকারে ৭ শটের পেনাল্টি শ্যুটআউট। অবশেষে যখন কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৫-৪ গোলের কাংখিত জয়টি এসেই গেল, তখন মেসিদের উল্লাসে কোন বাধা থাকার কথা নয়।
একেবারে শেষের নায়ক কে তাহলে? সার্জিও রোমেরো নাকি কার্লোস তেভেজ। পেনাল্টি শ্যুট আউটে যেভাবে মিসের মহড়া শুরু করেছিলেন লুকাস বিগলিয়া আর মার্কোস রোজোরা, তাতে কার্লোস তেভেজ যদি শেষ শটটা জালে জড়াতে না পারতেন তাহলে ভিন্ন কিছুও হতে পারতো। আবার রোমেরো যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে জুনিগার শটটি না ঠেকাতেন তাহলে তেভেজ শট নেওয়ার আগেই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারতো।
এমন অনেক আলোচনাই এখন হতে পারে। তবে ৯০ মিনিট এবং ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী টাইব্রেকারের ৭টি শট শেষে ম্যাচ জয়ীর নাম আর্জেন্টিনাই। কলম্বিয়াকে ট্রাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলেও নির্ধারিত সময়ে আর্জেন্টিনার জয় না পাওয়াটা খুবই হতাশাজনক। তবে মেসিদের হতাশা বাড়িয়েছেন শুধু কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। যেন খেলা হয়েছে আর্জেন্টিনা বনাম মুসলেরার মধ্যে। ২৬ মিনিটে পর পর দুটি গোল যেভাবে ফিরিয়েছেন তিনি তা এক কথায় অসাধারণ।
প্রথমে পোস্টের খুব কাছ থেকে নেয়া মেসির অসাধারণ এক হেড ক্ষিপ্র গতিতে ঠেকিয়ে নায়কে পরিণত হন মুসলেরা। এর খানিক পরই ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দিলেন সার্জিও আগুয়েরোর শটও। এছাড়া খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগেও নিকোলাস ওতামেন্দি একটি দুর্দান্ত হেড পোস্টের ওপর ঠেলে দিয়ে নায়কে পরিণত হন তিনি।
খেলার ৫ম মিনিটেই হ্যাভিয়ের পাস্তোরের একটি শট বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করা দিয়ে শুরু ওসপিনার। ২০ মিনিটে মেসি এবং আগুয়েরো- দু’জনকেই এক সাথে ঠেকিয়ে তাদের হেড করার সুযোগ নষ্ট করে দেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুন একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। কিন্তু গোলরক্ষকই ওই সময়কার বিপদ থেকে কলম্বিয়াকে রক্ষা করেন।
একপাসে যখন একের পর এক শট ঠেকিয়ে চলছেন ডেভিড ওসপিনা, তখন অপর পাশে অলস দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। পুরো ৯০ মিনিটে একটি মাত্র গোল সেভ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল তাকে।
৬৭ মিনিটে কলম্বিয়া একমাত্র গোলের সুযোগ তৈরী করেছিল। কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে দারুন হেড করেছিলেন জ্যকসন মার্টিনেজ। ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা থেকে রক্ষা করেন রোমেরো। এর একটু পর হামেস রদ্রিগেজও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তার শট বারের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা যখন গোলশূন্যভাবে শেষ হলো, তখনই টাইব্রেকারের বাঁশি বাজান রেফারি। লটারিরমত ভাগ্য নির্ধারণের এই খেলাও শেষ পর্যন্ত নাটক জমে ওঠে।
প্রথম শট নিতে আসেন রদ্রিগেজ। এই শটে গোল। আর্জেন্টিনার হয়ে শট নেন মেসি। এটিও গোল। দু’দলের পক্ষে দ্বিতীয় শট নেন রাদামেল ফ্যালকাও এবং এজেকুয়েল গ্যারে। এ’দুটিও গোল। তৃতীয় শট নিতে আসেন হুয়ান কুয়াদ্রাদো এবং এভার বানেগা। এ শট দুটিও গোল। তিনটি করে শটে দু’দলই ৩-৩ করে।
চতুর্থ শট নিতে আসেন কলম্বিয়ার লুইস মুরেল। কিন্তু পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন তিনি। আর্জেন্টিনার চতুর্থ শট নেন এজেকুয়েল লাভেজ্জি। ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা।
কলম্বিয়ার পঞ্চম শট নেন এডউইন কার্ডোনা। এটিও গোল। আর্জেন্টিনার ৫ম শট নিতে আসেন লুকাস বিগলিয়া। এটি গোল হলেই নিশ্চিত জয়। কিন্তু তার ডান পায়ের শটটি বেরিয়ে যায় ডান পাশ দিয়ে। নাটকীয়তার শুরু তখনই। আরও দুটি করে শট নেয়ার সুযোগ পায় দু’দল।
এবার শট করতে আসেন হুয়ান জুনিগা। তার শট বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক রোমেরো। এবারও আর্জেন্টিনার সামনে দারুন সুযোগ। কিন্তু মার্কোস রোজোর শট গিয়ে আঘাত হানলো সাইডবারে। এবার ৭ম শটের পালা। তখনও ব্যবধান ৪-৪।
কলম্বিয়ার শট নিতে আসেন জেইসন মুরিলো। স্নায়ুর চাপেই সম্ভবত শট মেরে দিলেন তিনি বারের ওপরে। দু’দলের চারজন টানা চারটি শট মিস করলেন। সর্বশেষ এলেন তেভেজ। আগুয়েরোর পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। স্নায়ুর উত্তেজনায় পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে পড়েছিল তখন। তেভেজের ডান পায়ের শটটি ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ওসপিনা। কিন্তু না, আর মিস নয়। এবার বলটি জড়িয়ে গেলো কলম্বিয়ার জালে। সঙ্গে সঙ্গে মেসিদের বাধভাঙা উল্লাস। সাথে যোগ দিল গ্যালারি এবং পুরো আর্জেন্টিাও।
নিউজবাংলা/একে