নিউজবাংলা: ১জুলাই, বুধবার:

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে আছে অবাঙালি বিহারিদের কলোনি। দীর্ঘদিন ধরেই তাদের এ আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক।

একদিকে যেমন বিহারি ক্যাম্পগুলোকে নানা অপরাধের ঘাঁটি কিংবা আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্টের কারণ বলে জানেন অনেকে, অন্যদিকে তাদের মানবেতর জীবনযাপন নিয়েও আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ। সরকারের অবস্থানেও আছে অনেকটা এই দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারের পক্ষ থেকে বিহারি ক্যাম্পে বসবাসকারীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

 

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এখন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার ভেতরের বিহারি ক্যাম্পগুলোকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী কোনো সুবিধাজনক এলাকায় স্থানান্তরের। এ ক্ষেত্রে গত বছর মিরপুর বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনার পর থেকেই এ উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগোচ্ছে সরকার। অনেকে বিষয়টি বিহারি ক্যাম্পগুলো উচ্ছেদ করে ওই স্থানে অন্য কোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বৈঠকে ঢাকা শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত অবাঙালি বিহারিদের আবাসনের অসুবিধা, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং মানবিক বিষয় বিবেচনাক্রমে তাদের ঢাকার পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে স্থানান্তরের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। একইভাবে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে বলা হয়। এর থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (ত্রাণ প্রশাসন) এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ত্রাণ প্রশাসন) অমিত কুমার বাউল কালের কণ্ঠকে বলেন, অবাঙালি বিহারিদের বসবাসের ক্ষেত্রে অধিকতর সুযোগ-সুবিধার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টিকে বিহারি ক্যাম্প উচ্ছেদের মতো কোনো ব্যাপার নেই। উদ্যোগ বাস্তবায়নের ব্যাপারে অগ্রগতি সম্পর্কে অমিত কুমার বাউল বলেন, জায়গা খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু সব দিক বিবেচনায় রেখে উপযোগী জায়গা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জায়গা পাওয়া গেলেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। বিহারিদের সংগঠন স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজেআরসি) সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন পাশা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই আমরা সরকারের কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি।

এখন অপেক্ষায় আছি সরকার আমাদের জন্য কী করে না করে তা দেখার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল অবাঙালি হলেও এখন বাংলাদেশের মানুষ হিসেবেই থাকতে চাই। সরকার আমাদের জন্য ভালো কোনো উদ্যোগ নিলে অবশ্যই আমরা তা মেনে নেব।’ এদিকে অন্যত্র স্থানান্তর না করা পর্যন্ত বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যও নজরদারি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গত সমন্বয় সভায় এ ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়। সভায় বলা হয়, বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের ব্যাপারে হাইকোর্টের আদেশের আইনগত বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্যাম্পের বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের জন্য বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করা হয়েছে। ওই সমন্বয় সভায় জানানো হয়, অবাঙালি বিহারি ক্যাম্পের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, জামালপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা-এ ১৩টি জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, যশোর, জামালপুর, খুলনা, রাজশাহী, গাইবান্ধা-ছয়টি জেলা থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠির জবাব এসেছে।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সব জেলা থেকে অবাঙালি বিহারি পরিবারের সংখ্যা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিষয়টি যাচাই করে পরিশোধ করার তাগিদ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ঢাকায় ৪৫ টি বিহারি ক্যাম্পে প্রায় ৬ লাখ লোক বসবাস করে।- কালের কন্ঠ

 

নিউজবাংলা/একে