নিউজবাংলা: ১জুলাই, বুধবার:
নিউজবাংলা ডেস্ক: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আবার বিএনপির হাল ধরার কথা বলেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে কথা হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি বিএনপির হাল ধরার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশ রক্ষায় ছোট-বড় সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আপনার নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ এ আহ্বানে সাড়া দেবে কিনা জানতে চাইলে জবাবে বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, শহীদ জিয়ার রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেই জাতীয়তাবাদী শক্তি পুনরুত্থান সম্ভব। সবাইকে বিএনপিতে যোগদান করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।’ বর্তমান বিএনপি প্রসঙ্গে বি. চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে না পারলে, মনে মনে আমরা জিয়ার আদর্শের মধ্যে আছি-এ কথা বললে লাভ হবে না। জিয়াউর রহমান সে সময় আমাদের সঙ্গে মিলে গ্রামে গ্রামে এক হাজার/দেড় হাজার মাইল পথ হেঁটেছেন, লাখ লাখ মানুষের সাথে হাত মিলিয়েছেন।
এক হাজার দুইশ’ মাইল খাল কেটেছেন, তিন শিফটে মিল ফ্যাক্টরি চালু করেছেন। এর ফলে তিনি জেনারেল জিয়া থেকে জনগণের জিয়ায় পরিণত হয়েছিলেন। আমাদের দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ এই বিষয়গুলোর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে। বিএনপি যদি আগে বাড়তে চায়, তাহলে তাদেরও তাই করতে হবে।’ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করে বি. চৌধুরী বলেন, ‘সরকার চেষ্টা করবে যাতে অন্য কোনো দল নির্বাচনে না আসে। এলেও ভোট ডাকাতির জন্য তাদের নিজস্ব ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরপেক্ষ নির্বাচকম-লির তত্ত্বাবধানে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বদলে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’
জিয়াউর রহমানের প্রকৃত আদর্শে বিশ্বাসীদের নিয়ে আলাদা কোনো ফোরাম গঠন করবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দল বিকল্পধারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসীদের নিয়ে গড়া। আগামীতে আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি জোরদার করব। বিএনপি চেয়ারপার্সন সাজাপ্রাপ্ত হলে আপনি বিএনপির হাল ধরবেন কিনা-এমন প্রশ্নে বি. চৌধুরী বলেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপির হাল ধরার জন্য প্রয়োজন হলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিজস্ব লোকই হাল ধরবেন।’ তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অবৈধ। তাই বর্তমান সরকারও অবৈধ। এ সরকারের সকল কর্মকা- অবৈধ। এভাবে দেশ চলতে পারে না। সরকার পুলিশ দিয়ে যতই ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করুক না কেন, জনগণ মাঠে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করলেই সরকার পতন ঘটবে।
খালেদাকে বাদ দিয়ে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি, এমন প্রশ্ন নাকোচ করে দিয়ে বি চৌধরী বলেন, যা শুনেছেন তা গুজব। আমি বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে পুনর্গঠন করতে পরার্মশ দিয়েছি। তবে দল ঢেলে সাজাতে আমার সহযোগিতা চাইলে আমি তা করবো।
সংকট নিরসনের উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দেশে চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। একদিকে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যদিকে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বাংলাদেশের মাটি একটি গণঅভ্যূত্থানের প্রসব বেদনায় উদ্বেল হয়ে উঠেছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে আলোচনা এসেছেন বি. চৌধুরী। তার এ ধরনের সমালোচনামূলক বক্তব্যের কারণে বিএনপি অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে দলে আবার ফিরছেন বি চৌধুরী। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমালোচনা করে নতুন করে আলোচনায় আসেন বি. চৌধুরী। এরপর গত ১২ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির একটি স্টেজ ছিল : জিয়াউর রহমানের রাজনীতি; তারপর এলো খালেদা জিয়ার রাজনীতি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তারপর থার্ড স্টেজ জামায়াতনির্ভর খালেদা জিয়ার রাজনীতি। এই স্টেজ বেশি দিন থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ. চতুর্দিকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপও খুব বেশি। কিন্তু একটি চতুর্থ স্টেজ আসতে বাধ্য। যখন ঘুরেফিরে আবার জিয়াউর রহমানের রাজনীতি তুলে ধরবে।’ তার এ বক্তব্যের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়।
প্রসঙ্গ, তা দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। পরে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অক্টোরব থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইমপিচমেন্ট করার উদ্যোগ নিলে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

নিউজবাংলা/একে