নিউজবাংলা: ৮জুলাই, বুধবার:

ঢাকা : ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। ফাঁকারাস্তায় অনেকেই গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালান বেপরোয়াভাবে। ঘটে দুর্ঘটনা।

তাই ছুটির সময়টাতে হতে হবে সচেতন।

প্রায় এক বছর হয়ে গেল। এখনো প্রতি সপ্তাহে ফিজিওথেরাপি নিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদুল আলমকে। গত বছর ঈদের সময় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে সোনারগাঁও গিয়েছিলেন সাজ্জাদ। দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে সামনের চাকা লেগে উল্টে যান সাজ্জাদুল।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঘটে দুর্ঘটনাটি। তিনি ও তাঁর বন্ধু গুরুতর আহত হন। বাঁ কাঁধে গুরুতর আঘাত, বাঁ হাতের দুই জায়গায় ভাঙা আর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে আঘাত নিয়ে বেঁচে যান তিনি। ছেঁচড়ে পায়ে অনেকখানি মাংস খুবলে উঠে গিয়েছিল। সেই ক্ষত সেরে গেলেও এখনো বাঁ কাঁধ আর গোড়ালির আঘাত সারেনি। ভারী কিছু ধরতে গেলেই কাঁধ থেকে হাত খুলে আসে। গোড়ালির কারণে ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না।

চিকিৎসকেরা ওষুধ, বিশেষ ব্যায়াম দিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ফিজিওথেরাপিও নিতে হয়।

একদিকে ঈদের আনন্দ, আরেক দিকে ফাঁকা শহর। এই সুযোগে ঢাকার রাস্তাগুলোতে কেউ কেউ ‘প্রাণ খুলে’ গাড়ি চালাতে নামেন। ফলাফল—সাজ্জাদুলের মতো দুর্ঘটনা। পুলিশ, হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালনার ফলে প্রতিবছর ঈদের ছুটিতেই ঢাকার ফাঁকা রাস্তাগুলোতে ঘটে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা।

গত বছর ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনায় রাজধানীতে চারজন নিহত হন। আহতের সঠিক হিসাব নেই কারও কাছে। ঢাকার বাইরেও দুর্ঘটনার সংখ্যা কম নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর, ঈদুল ফিতরের তিন দিনে সারা দেশে ৭৮ জন নিহত হয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের তিন দিন বন্ধের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চবিত্ত তরুণেরা মোটরগাড়ির শোভাযাত্রা বের করেন। উচ্চ গতিতে গাড়ি চালিয়ে আনন্দের প্রকাশ ঘটান তাঁরা। ফাঁকা রাস্তায় চলে গাড়ি দৌড়ের প্রতিযোগিতা (রেসিং)। গাড়ির চেয়ে বিপজ্জনক হলো মোটরসাইকেল। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বেশি গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রতি ঈদে অনেক তরুণ হতাহত হন।

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) তিন বছর আগের এক পরিসংখ্যানে বিষয়টি বোঝা যায়। হাসপাতালটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ঈদের পাঁচ দিনের ছুটিতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় সাড়ে ৪০০ জন। এঁদের ১৪০ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়েই এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীর কাঁটাবনের মোটরসাইকেল সারাই দোকানের মালিক মো. ইউনুস বলেন, প্রতিবছর ঈদের পরপর তাঁর দোকানে দুর্ঘটনায় ভাঙা মোটরসাইকেল সারাতে আসেন অনেকে। এঁদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। তিনি বলেন, ‘রাস্তা ফাঁকা পাইয়া উড়াধুড়া চালায়। গাড়ি সামলাইতে পারে না। পইড়া নিজেরা মরে, মানুষরে মারে আর গাড়িও ভাঙে।’

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, উৎসব-আনন্দ উদ্যাপনে এখন তরুণদের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। মাদক সেবন করে উচ্চ গতিতে যানবাহন চালনার ফলে সব ধরনের উৎসবেই কিছু না কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসীরুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এ সময়ের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও হবে অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন। ঈদে তরুণেরা যাতে দ্রুত গতিতে গাড়ি-মোটরসাইকেল না চালান, সে বিষয়ে রোজার শেষের দিকে প্রচারণা চালাবে পুলিশ। আর অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে, তাঁরা যেন চালক লাইসেন্স ছাড়া ছেলে-মেয়েদের হাতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল না দেন।-প্রথম আলো

নিউজবাংলা/একে