নিউজবাংলা: ২০জুলাই, সোমবার :

ঢাকা: ঘরে ফেরা মানুষ ঈদের ছুটি শেষে এবার রাজধানীমুখী হতে শুরু করেছে। তবে যানজটের চিরচেনা ঢাকা এখনো ফাঁকা।

সোমবার অফিস-আদালত খুললেও ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন ও মানুষ ছিল একেবারেই কম।
হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ। যানবাহনও কম। মানুষের চলাচলও সীমিত। জনবহুল রাজধানীর এখন অনেকটা জনশূন্য। ঈদের ছুটি শেষে সোমবার থেকে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। সরকারি-আধা সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা হলেও উপস্থিতি কম। রাজধানীর পুরনো চেহারায় ফিরতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে অনেকে।
কোথাও যানজট নেই, নেই আটকে থাকার বিড়ম্বনা। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীর যেকোনো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে। ফুটপাতগুলোতে নেই দোকান পাট। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিকশার জটলাও কম। এমন কী দোকানপাটও বন্ধ। চেনা রাজধানী যেন অনেকটাই অচেনা। তবে এ চিত্র বেশি দিন থাকবে না।
নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া, আবার রুজির টানে ঢাকায় ফিরে আসা। নগরীর বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে তাই ঢাকামুখি মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছে।
রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢাকায় ফিরে শুরু করেছে মানুষ। ঈদের আগে যে হারে বাস ছেড়ে গিয়েছিল, সেই হারে এখনো ঢাকায় ফিরছে না বাসগুলো। আবার অনেক বাস অল্প যাত্রী নিয়েই ঢাকামুখি হচ্ছে।
বাড়িতে যাওয়ার সময় টার্মিনালগুলোতে যে দুর্ভোগ ছিল, ঢাকায় ফেরার পথে তেমন কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
গাবতলী বাস টার্মিনালে খুলনা থেকে আসা সুন্দরবন বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার রবিউল জানান, এখনো পুরো দমে মানুষের আসা শুরু হয়নি। আগামী রোববার থেকে যাত্রীদের চাপ শুরু হবে।
ফরিদপুর থেকে আসা বোরহান বিশ্বাস নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় পাটুরিয়া ফেরিঘাটে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু এবারের ঈদে কোনো অপেক্ষা করতে হয়নি। মনে করেছিলাম, ঢাকায় আসার পথে অন্তত কিছুটা সময় হলেও অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সর্ম্পূণ উল্টো চিত্র। ঘাটে বসে আছে ফেরি। বাস না থাকায় ছাড়তে পারছে না। ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে মাত্র চার ঘণ্টা, যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যানবাহর পারাপারের জন্য ১২টি ফেরি থাকে। এর মধ্যে দুটি থাকে অকেজ। ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটের দুই পারে যানজট লেগে থাকতো। এ বছর ঈদে ১৮টি ফেরি মোতায়েন রাখা হয়। ফেরির কোনো স্বল্পতা ছিল না। এসব কারণে কোনো যানজট নেই।’
পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের ম্যানাজার( মেরিন) মো. আব্দুস সোবহান জানান, গত বছর ঈদের সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরির গতি বাড়াতে সরকার ফেরি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত বছর এ সময় এ ঘাটে ফেরি ছিল মাত্র ১২টি। আর বর্তমানে ফেরি আছে ১৮টি। এর মধ্যে নয়টি রো রো, তিনটি কে-টাইপের ও ছয়টি ইউটিলিটি ফেরি।
১৮টি ফেরি সার্বক্ষণিক সচল থাকার কারণে কখনই ঘাটের দুই তীরে যানজট হয়নি। ঈদেও কোনো ধরনের যানবাহন চলাচলের সমস্যা হয়নি। যাত্রী দুর্ভোগও ছিল না।
এদিকে বাস কাউন্টারগুলোতে কর্মরতরা জানান, আগামী রোববার থেকে বেশির ভাগ লোক ঢাকায় ফিরবেন।
বাসযাত্রী শরিফুল জানান বলেন, ‘আমার বাসা আমিনবাজার আর অফিস কাওরান বাজার। আমার অফিসে যেতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সোমবার লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। ঢাকার রাস্তার অবস্থা যদি সব সময় এমন হতো, তাহলে অফিসে যাওয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তাই হতো না।’
তবে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী চলাচলকারী বিআরটিসি পরিবহনের চালক কালাম জানান, রাস্তায় মানুষ খুব কম, সিট খালি রেখেই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তবে আগামী দুএক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তার প্রত্যাশা।

নিউজবাংলা/একে