নিউজবাংলা: ০৯ জানুয়ারি, শনিবার:
মজিবর রহমান শেখ, বালিয়াডাঙ্গী(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
‘ও’ বউ ধান বানোরে’ গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী গানটি আর তেমন শোনা যায় না। চোখে পড়ে না আর ঢেকিতে পাঠ দিতে গ্রামীণ বউদের এই গান গাওয়ার দৃশ্য আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের কৃষান কৃষাণীদের ভালো মানের চাল তৈরী করার প্রধান মাধ্যম কাঠের ঢেকি।
কালের পরিবর্তনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর। গ্রাম বাংলার কৃষকদের বাড়ী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতের গোনা দুই একজন কৃষকের বাড়ীতে কাছের তৈরী প্রচীন তম ঢেকি এখনও চোখে পড়ে। ধান চাল আটা ও চিরা ভাঙ্গানোর জন্য বৈদুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীণ কৃষকরা সহজেই ধান, আটা ও চিরাকম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। তবে চাল তৈরীর কদর কালের পরিবর্তনে আস্তে আস্তে কমে গেলেও পোষ মাসে আতœীয় স্বজনদের আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এই এলাকায় শীতের সময় পিঠা পুলি তৈরীর মুল উপাদান চাল থেকে আটা তৈরীর জন্য কাঠের ঢেকির কদর বেড়ে যায়। মা বোনদের কাছে এই আটা দিয়ে পিঠা তৈরীতে কোন বেদ পেতে হয় না। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের বাদমেছিল গ্রামের পারভীন আক্তার(৩৫) জানান, আমার শ্বশুর শ্বাশুরীর আমন থেকেই এই বাড়ীতে ঢেকি আছে। পারিবারিক প্রয়োজন খুব বেশি ব্যবহার না করলেও শীতের সময় আমার প্রয়োজন মত আটা তৈরী সহ প্রতিবেশীরা প্রায় প্রতিদিনই পিঠা তৈরীর আটা ভাঙ্গানোর জন্য ভিড় জমায়। সত্যিই এর কদর একেবারে শেষ হচ্ছে না। বামুনিয়া গ্রামের হাজেরা বেগম(৪০) জানায় এই ঐতিহ্যবাহী ঢেকি অনেকটা স্মৃতিবশতই ধরে রেখেছি প্রায় ২০ বছর ধরে। এই ঢেকিতে ধান আটা ও চিরা ভেঙ্গে আসছি। এলাকার লোকেরা আটা ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসে। এর বিনিময়ে প্রতি কেজি চালের আটার জন্য ৫-৭ টাকা করে নি। ঢেকির গুন সর্ম্পকে প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও নাকী ধান বানে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাপ দাদার মাটির বাড়ী ঘরে বদলে ডিজাইন করে, ইটের বাড়ী ঘর তৈরী বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেকে বাড়ীতে ঢেকি রাখার জন্য জায়গা থাকছে না। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেকি বিলুপ্তির কারণে হয়তো আর কারও চোখে পড়বে না বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments