নিউজবাংলা: ১৫ জানুয়ারি, শুক্রবার:
মো.ইমরান, কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥
এক সময় উত্তরাঞ্চলের সবজিই ছিল সাগর পাড়ের জনপদ কলাপাড়া মানুষ’র সবজি বাজারের ভরসা। সে দৃশ্যপট এখন পাল্টে গেছে।
অবারিত মাঠ-প্রান্তর জুড়ে সবজি ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। অনুকুল আবহাওয়া, চাষে কম মাত্রার সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, অধিক ফলন, আর বাজারজাত করনে কোন প্রকার কীটনাশকের প্রয়োগ ছাড়া তাজা এই সবজির কদর এখন সবার কাছে। ভোর রাতে মাঠ থেকে সবজি তুলে সরাসরি এলাকার আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করা হয়। এই সবজিই এখন বিক্রি হচ্ছে বরিশাল বিভাগের সকল জেলা-উপজেলায়। এমনকি রাজধানী ঢাকার বাজারেও বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষী আবুল বাশার। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, কাংখিত লক্ষ্যমাত্রায় ধান উৎপাদন না হওয়া আর উৎপাদিত ধানের বাজার মুল্য না পাওয়ায় দেনায় জর্জরিত হয়ে যখন একরাশ হতাশায় নিমজ্জিত। তখন নিজেই সিদ্বান্ত নেন সামান্য উচু জমিতে সবজি চাষের। এই সামান্য জমির সবজি তাকে দেখায় আলোর পথ। আবুল বাশারের দেখাদেখি পরিবারের সবাই মিলে তাদের কুড়ি একর জমিতে গড়ে তোলে বিশাল সবজি বাগান।
সারা বছর সবজি বাগানে শ্রমের বিনিময়ে দায়-দেনা শোধ করে এখন তারা সাবলস্বী। ক্রয় করেছেন জমি। তাতেও গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান, মাছের ঘের। সবজি ছাড়াও বারোমাসী বড়ই, পেয়ারাসহ নানাবিধ ফলের চাষ করছেন। এমনটাই জানালেন নীলগঞ্জের সবজি চাষী আবুল বাশার। আরেক চাষী নুর মোহাম্মদ গাজী জানালেন, দশ বছর ধরে সবজি চাষের আয়ে সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে এনেছেন। দায়-দেনা শোধ করে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ থেকে পচিশ বছর আগে আবুল বাশার সবজি চাষের মাধ্যমে ভাগ্যের চাকা যেভাবে ঘুরিয়েছেন তা দেখে আজ গ্রামের অনেকেই করছেন সবজি চাষ। এখন গোটা নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ছয়’শ কৃষক পরিবার সবজি চাষ করছে। ধান চাষের জমির একটি অংশ আবার অনেকে তাদের সামান্য চাষের জমিতেই সবজি চাষে পেয়েছেন সফলতা আর সাবলম্বীতার পথ। শুধু ছয়’শ পরিবার নয় এখন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের আঙ্গিনায় হচ্ছে সবজি চাষ। ক্ষেত পরিচর্যা করতে করতে এসব কথা জানালেন সবজি চাষী মামুন মুন্সী, আবুল হোসেন, নুর মোহাম্মদ গাজী, মনির, রূহুল আমিন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জেলার সবজি উৎপাদনে নীলগঞ্জ অনেক বেশি এগিয়ে। ফলে সবজি পল্লী হিসাবে ইতিমধ্যে সুনাম কেড়েছে নীলগঞ্জ। শুধু নীলগঞ্জ নয় এখন সারা বছর সবজির আবাদের তালিকায় উঠে আসছে চাকামইয়া, ধানখালী, ধুলাস্বর, টিয়াখালী, মিঠাগঞ্জ’র নাম।
অনেক সবজি চাষী কৃষি অফিসের সহায়তার কথা জানালেও অনেকেই জানালেন কৃষি বিভাগের সহায়তা না পাওয়ার কথা। যা পাওয়া যায় তাও প্রয়োজনের তুলনায় যতসামান্য। কৃষি বিভাগের সময়মতো পরামর্শ ও যথাযথ সহযোগিতা পেলে আরো ভাল ফলন আর লক্ষ্যমাত্রার অধিক সবজি উৎপাদনের কথা জানান সবজি চাষীরা।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments