নিউজবাংলা: ২৩আগষ্ট,রোববার:

মো: শাবিব হোসেন, রাজশাহীর:

বর্ষা পেরিয়ে শরতের শুরুতেই ফেঁপে উঠেছে রাজশাহীর পদ্মা। আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। হয়ে উঠেছে ভূমিগ্রাসী। বছরের পর বছর ধরে পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারাচ্ছে রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার পদ্মাপাড়ের মানুষ।

উৎকণ্ঠায় রয়েছে রাজশাহী শহরবাসীও। উজানে থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মায় পানি বাড়ায় ভাঙন নিয়ে নানা শঙ্কায় এবারও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কূলঘেঁসা কয়েক হাজার মানুষ। পদ্মার ভাঙন থেকে কোনভাবেই যেন পৈত্রিক ভিটেমাটি ও আবাদী জমি রক্ষা করতে পারছেন না চারঘাট-বাঘার নদীপাড়ে বসবাসকারী লোকজন। এদিকে, রাজশাহী মহানগরীতে বিপদসীমার মাত্র ২ দশমিক ৪৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা। হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় পদ্মার বামতীরে গত সপ্তাহ থেকে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবার ভাঙন শুরু হলে জনপ্রতিনিধিরা তা প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয় না কোন দিনই। এভাবে চলতে থাকলে রাজশাহীর মানচিত্র থেকে একদিন মুছে যেতে পারে পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রামের নাম। এরই মধ্যে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলার আতারপাড়া নামের একটি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার শহীদুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৬.২৫ মিটার। শুক্রবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ১৬.৫০ মিটার উচ্চতায় পদ্মা প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে শনিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় তা ১৬.৭০ মিটার ছাড়িয়ে গেছে। যা বিপদসীমার মাত্র ২.৪৮ মিটার নিচে। রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮.৫০ মিটার। এভাবে পদ্মার পানি বাড়তে থাকলে দু’একদিনেই তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পরে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পাউবোর গেজ রিডার শহীদুল ইসলাম।   ভাদ্রের শুরুতে এভাবে হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করায় রাজশাহীর বুলনপুর, জিয়ানগর, বড়শী, নবগঙ্গা. চারঘাট উপজেলার টাঙন থেকে শুরু করে ইউসুফপুর বামতীর, মোক্তারপুর, গৌরশহরপুর, গোপালপুর, চন্দনশহর, পিরোজপুর, রাওথা, বাঘার মীরগঞ্জ, হরিরামপুর, আলাইপুর ও কিশোরপুর জুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। প্রতিদিনই খণ্ড খণ্ড জমি ভেঙে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত ভাঙনের মুখে বড়শী এলাকার বামতীর সংলগ্ন আমগাছ কেটে নিতে শুরু করেছেন মালিকরা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী সোবহান আলী মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, গত চার বছরের ভাঙনে তার প্রায় দেড়শ’ বিঘা আবাবি জমি গিলে খেয়েছে ভূমিগ্রাসী পদ্মা। সব হারিয়ে তিনি এখন নি:স্ব। তার মত অনেকের অবস্থা একই বলে জানান সোবহান আলী মোল্লা। এর আগে, রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুরে বামতীরের ভাঙন এলাকায় অস্থায়ীভাবে প্রতিরোধ কাজ করে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অস্থায়ী কাজের অংশ হিসেবে সেখানে বাঁশের পাইলিং, বালু ভর্তি ব্যাগ ও জিও টেক্স বিছানো হয়। ৪০ মিটার দীর্ঘ ওই কাজে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে জানান, পানি বাড়লেও গত বছর পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট রাজশাহীতে পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭.৪৫ মিটার। এছাড়া ২০০৩ সালের পর টানা ৯ বছর (২০০৪ থেকে ২০১২) রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮.৮৫ মিটার। এরপর টানা ৯ বছর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার উচ্চতা ছিল ১৮.৭০ মিটার অর্থাৎ বিপদসীমার ওপরে। হারুন-অর-রশিদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণেই দেশের উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভাঙন ও বন্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে রাজশাহীতেও পদ্মার পানি অতি দ্রুত বাড়ছে। তবে এতে এখনই উদ্বেগের কারণ নেই। পদ্মা পাড়ে এখনো বড় ধরনের ভাঙন হয়নি। ইউসুফপুরের ভাঙন শুরু হলেও সেখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বাড়ার বিষয়টি ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

নিউজবাংলা/একে