নিউজবাংলা: ২৩আগষ্ট,রোববার:
ঢাকা: নিম্ন আদালত থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার নথি তলব ও দুদকের দেয়া প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার অব্যাহতিপত্র (ফাইনাল রিপোর্ট) তলব করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা দুই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।
আদালতে খালেদার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। অপরদিকে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এ আদালতেই কয়লা খনি মামলা বাতিল বিষয়ে প্রায় সাত বছর আগে জারি করা রুলের ওপর শুনানি চলছে। রুল শুনানির এক পর্যায়ে দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
আবেদনের বিষয়ে আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি দায়েরের পর এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল হককে এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয় দুদক। এদিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করতে থাকেন। এ অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৩ ও ১৮ মে তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক আসামিদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি নেন। একই বছরের ১ জুন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক সব আসামিকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল না করে উপপরিচালক আবুল কাশেম ফকিরকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে। এ তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৮ সালের ৫ অক্টোবর সব আসামিকে সম্পৃক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
ব্যারিস্টার রাগীব আরো বলেন, ‘দুদক আইনে একই বিষয়ে পুনঃতদন্তের কোনো বিধান নেই। কোনো ক্ষেত্রে অধিকতর তদন্ত করতে হলে, সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার প্রয়োজন হলে- সে ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এ মামলায় পুনঃতদন্তের বিষয়ে ও পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। আদালতকে অবহিতও করা হয়নি। এ কারণে এ মামলা চলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা এ মামলার অব্যাহতিপত্র ও মামলার নথিপত্র তলব চেয়ে দুটি আবেদন করেছিলাম।’
এদিকে এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেছেন, ‘তারা এ দুটি আবেদন করেছেন আসলে মামলা বিলম্ব করার জন্য। যে ফাইনাল রিপোর্ট ও মামলার নথিপত্র তারা তলব চেয়েছে সেগুলো তাদের নথির সঙ্গে তারা দাখিল করেছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।
একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি চলছে। এ অবস্থায় মামলার নথি তলব চেয়ে মঙ্গলবার আবেদন করা হয়। ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- প্রয়াত অর্থমন্ত্রীএম. সাইফুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, একেএম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এসআর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।