নিউজবাংলা: ০৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার:

ঢাকা: জমি সংকটের কারণে অরক্ষিত সীমান্ত যথাযথ নিরাপত্তার আওতায় আনতে পারছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, স্থানীয় পাহাড়িদের বাধা ও দেশি-বিদেশি অপশক্তির অপতৎপরতায় তিন পার্বত্য অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে বিজিবি।

এসব কারণে বান্দরবানের আলীকদমে বিজিবির ৫৭ ব্যাটালিয়নের দপ্তরসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। ফলে ৮০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত পাহারা দিতে যেতে হচ্ছে বিজিবি সদস্যদের। এ সুযোগে ৩৬৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমানা দিয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সদস্যরা ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখ-ে। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা। আলীকদমসহ পার্বত্য অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্তে ব্যাটালিয়ন বসাতে পারলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিজিবির কর্মকর্তারা।

পার্বত্য অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্তে ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালের শুরুর দিকে। নতুন এই ব্যাটালিয়নে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৮০০টি। কিন্তু জমি সংকটের কারণে গত দেড় বছরেও নতুন এ ব্যাটালিয়নের জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি বিজিবি কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে বান্দরবান সদরের অদূরে বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ট্রেনিং সেন্টার বিজিটিসি থেকেই আলীকদম সীমান্তে পাহারা দিতে যেতে হচ্ছে। বায়তুল ইজ্জত থেকে আলীকদম সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। পাহাড়ি এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে গিয়ে সীমান্ত পাহারা দেওয়াটা বেশ ঝক্কির। বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে ২৫ একর জায়গার অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই জমি নিজেদের দাবি করে মামলা ঠুকে দেয় স্থানীয় বন বিভাগ। বন বিভাগের দাবি, ওই জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অংশ। এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসন বলছে, বিজিবির জন্য নির্ধারিত ওই ২৫ একর জায়গা খাস জমি, বন বিভাগের নয়। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের এমন বিপরীতমুখী প্রবণতাকে সমন্বয়হীনতা হিসেবে দেখছে বিজিবি কর্তৃপক্ষ।
বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বিজিবির নতুন ব্যাটালিয়ন স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তাতে প্রথমেই বাগড়া দেয় স্থানীয় পাহাড়িরা। তারা জমি বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। ওই স্থানে তারা রাতারাতি ধর্মীয় উপাসনালয়ও গড়ে তোলে, যেন বিজিবি কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে। এমনকি দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিজিবির ওপর।

বিজিবির তথ্যানুযায়ী, আলীকদমের বিপরীত দিকে মিয়ানমারের আরাকান সীমান্ত। সেখানে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাহারার পাশাপাশি রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। কিন্তু বাংলাদেশের আলীকদম সীমান্তের অনেকটা এখনো অরক্ষিত। নেই কোনো বিওপি। নেই কাঁটাতারের বেড়া। এই অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাই কাজে লাগাচ্ছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এসব পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে তারা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এ নিয়ে একটি গোপন প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিজিবি, যাতে উঠে এসেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর অপতৎপরতার বিশদ বিবরণ।

বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত এক বছরে ১০০ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমানা এলাকা কমিয়ে এনেছে বিজিবি। আগামী এক বছরে আরও ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে জমিবিষয়ক সমস্যাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বাহিনীটি। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন নতুন বিওপি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমির সমস্যার কারণে বারবার থমকে যাচ্ছে এ কার্যক্রম। স্থানীয় যারা অস্ত্র-মাদক ব্যবসায় জড়িত, তারাই মূলত পাহাড়িদের উসকে দেয় জমিবিষয়ক সমস্যা সৃষ্টির জন্য। কারণ বিজিবির ক্যাম্প হলে তারা সংকটে পড়ে যাবে। এ ছাড়া পাহাড়িদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা এনজিওগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিজিবিপ্রধান। তিনি বলেন, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের কাউকে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে বিজিবি। -আমাদের সময়

নিউজবাংলা/একে