নিউজবাংলা: সোমবার, ২৯জুন:

পিরোজপুর: এবার মানবদেহে জিংকের চাহিদা মেটাবে নতুন জাতের ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪। জিংক

সমৃদ্ধ প্রযুক্তিতেই দেশে উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন জাতের এই ধান। মানবদেহে জিংকের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এটি। সে লক্ষ্যেই এ বছর কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে নতুন জাতের এই ধান।
কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণসহ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে দেয়া হবে নানা প্রশিক্ষণ। বিশ্বে সর্ব প্রথম বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪ উদ্ভাবন করেছে। এর আগে, ব্রি ধান-৬২’র উদ্ভাবন সফল হওয়ায় একই জাতের ব্রি ধান-৬৪ উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এবারই প্রথম চলতি বোরো মওসুমে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয় এ ধানের আবাদ। প্রথম বারের মত উচ্চ ফলনশীল জাতের এই ধান চাষ করে কৃষকেরা আশাতীত ফলন পেয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
চলতি মওসুমে প্রায় সাড়ে ৬শ’ কৃষক এবারই প্রথম উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ব্রি ধানটি চাষা করেন। এ অঞ্চলের কৃষকেরা স্থানীয় জাতের ধান চাষা করে থাকেন। যার ফলন বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মণের বেশি হয় না। কিন্তু এ বছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৬৪ চাষ করে কৃষকেরা দ্বিগুন ফলন পেয়েছেন। পরীক্ষামূলক ভাবে ১৩টি উপজেলায় প্রায় ৭শ’ বিঘা জমিতে ধানটি চাষ করা হয়। এতে বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ করে ধান উৎপাদন হয়েছে বলেও কৃষকেরা জানান।
তাছাড়া এর ভাত খেতেও সুস্বাদু। তাই আগামীতে এ এলাকায় জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪’র চাষাবাদ ব্যাপক প্রসার লাভ করবে বলে কৃষি বিভাগের ধারণা।
এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ প্রোগ্রাম ফেস-২ কর্মসূচির আওতায় সংস্থাটি স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে। এর মধ্যে পিরোজপুরের জিয়ানগর, ভাণ্ডারিয়া, ঝালকাঠির নলছিটি, বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, বরগুনার বেতাগী ও আমতলী, পটুয়াখালী সদর, বাউফল ও দশমিনা এবং ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনে ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪ চাষ করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চলে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সুক, ভোলার পিডিআই, বরগুনার বেতাগীর ইজওয়া এবং পটুয়াখালীর পিডিও নামে চারটি স্থানীয় এনজিও কাজ করে। এজন্য ৬৫০ জন কৃষকের হাতে পৌঁছে দেয়া হয় জন প্রতি ৩-৫ কেজি করে ধানের বীজ। দেয়া হয় বিনামূল্যে সারসহ এ বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ।
ব্রি ধান-৬৪’র জীবনকাল ধরা হয়েছে ১৪৫-১৫০ দিন। প্রতি কেজি ধানে জিংক বিদ্যমান রয়েছে ২৪ মিলি গ্রাম। আর হেক্টর প্রতি এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাড়ে ছয় থেকে সাত টন। যা অন্যান্য ধানের চাইতে অনেক বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোও বেশ উৎফুল্ল।
এ ব্যাপারে জিয়ানগরের চরানী পত্তাশী গ্রামের কৃষক নিয়াজ মাহমুদ জানান, নতুন জাতের এ ধান দুটির বিশেষ গুণাগুণের কথা জেনেই তারা এ বছর এটি চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন।
জিয়ানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অমিতাব মণ্ডল জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪ মানবদেহের জিংকের অভাব পূরণ করবে। তাই উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফলন বাড়াতে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করতে পারলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বছরই কৃষকেরা ভালো ফলন পাবেন বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ শিশু ও কিশোরী জিংকের অভাবে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে শিশুদের বয়োসন্ধিকালে শরীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির জন্য জিংকের চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের তিন বেলা ভাত খেতে হয়। সেহেতেু ভাতের মধ্যে এর চাহিদাটা বিদ্যমান থাকলে অভাবটা সহজেই পূরণ হবে।’
স্বদেশ উন্নয়ন কেন্দ্র (সুক) পিরোজপুর জেলা সমন্বয়কারী সেলিম হওলাদার জানান, নিয়ন্ত্রিত জিংক সেবনে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়ার তীব্রতা হ্রাস পায়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে উদ্ভাবিত নতুন জাতের জিংক সম্মৃদ্ধ ব্রি ধান-৬২ ও ৬৪ চাষাবাদের জন্য প্রান্তিক চাষীরা আগামীতে আরও উৎসাহিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিউজবাংলা/একে