নিউজবাংলা: ১৩ ডিসেম্বর, রোববার:
ঢাকা: সন্তান জন্মের পর পিতা-মাতার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলোর মধ্যে সন্তানের নামকরণ অন্যতম প্রধান একটি দায়িত্ব।
অর্থপূর্ণ ও রুচিসম্পন্ন সন্তানের নামকরণকে ইসলাম অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, মানুষের জীবনে নামের বিশাল প্রভাব রয়েছে। কাজেই সন্তানের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক মা-বাবার নৈতিক দায়িত্ব। যাতে এ নামের প্রভাবে পরবর্তী জীবনে সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে শুচি-শুভ্রতা ফুটে ওঠে।
ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের ওপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে হাদিসে বর্ণিত আছে। এ প্রসঙ্গে শায়েখ আবু বকর আবু যায়েদ (রহ.) বলেন, ঘটনাক্রমে দেখা যায়, ব্যক্তির নামের সঙ্গে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহরতায়ালার হেকমতের দাবি। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্য পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভালো নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভালো হয়ে থাকে।
ইমাম মালেক (রহ.)-এর প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘মুয়াত্তায়’ বর্ণিত আছে। হজরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবের (রা.) কাছে জুহারনা গোত্রের এক ব্যক্তি এলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কী? সে বলল, জামরা (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কার পুত্র? সে বললো, ইবনে শিহাব (অগ্নিশিখার পুত্র)। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন গোত্রের? সে বললো, হারাকা (প্রজ্জলন)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? সে বললো, হারাকা (অগ্নিগর্ভে)। সর্বশেষে ওমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, কোন অংশে? সে বললো, বিজাতিল লাজা (শিখাময় অংশে)। হজরত ওমর (রা.) তাকে বললেন যাও, তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ, তারা ভস্মীভূত হয়েছে! লোকটি বললো, তাদের কাছে এসে দেখলাম সত্যিই তারা সকলেই ভস্মীভূত হয়েছে।
মন্দ নামের প্রভাব মানুষের চরিত্র ও আচরণকে প্রভাবিত করে। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) নিকট কেউ আসলে তার নাম জিজ্ঞাস করতেন। নাম পছন্দ হলে নবী করিম (সা.) খুশি হতেন, অপছন্দ-অর্থহীন হলে তা পরিবর্তন করে অর্থপূর্ণ নাম রেখে দিতেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসে অর্থবোধক ভালো নাম রাখার ব্যাপারে তাকিদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সন্তানদেরকে তার পিতার নামেই ডাকো, সেটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’ –সূরা আল আহজাব: ৫
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা সাহাবারা হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর! পিতার হক সর্ম্পকে তো আমরা আপনার কাছ থেকে জানলাম। পিতার ওপর সন্তানের হক কী এ ব্যাপারে আমাদেরকে জানান। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, পিতা সন্তানের অর্থপূর্ণ ভালো নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দিবে। -বায়হাকি শরিফ
হজরত আবু ওহাব জুশানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখবে। তবে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নাম হলো- আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।’ আবু দাউদ শরিফ
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সন্তানের সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে তাকে বিবাহ প্রদান করে।’ –বায়হাকি
হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামে ডাকা হবে। অতএব তোমাদের নামগুলো অর্থবোধক রাখো।’ –সুনানে আবু দাউদ
বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামি স্কলার ইবনে কাইয়্যুম জাওযি (রহ.) তার কিতাব ‘তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ’ এ লিখেছেন, ‘নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই মানুষের ভালো-মন্দ আচরণ, চরিত্র ও কর্মধারা প্রভাবিত হয়। মন্দ নামেরও মন্দ প্রভাব রয়েছে।’
আল্লাহতায়ালা সবাইকে তাদের সন্তানের ভালো ও অর্থবোধক নাম রাখার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক, এহসান বিন মুজাহির
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments