নিউজবাংলা: ১৮ ডিসেম্বর, শুক্রবার:
ঢাকা: ইসলাম প্রচারের জন্য নবী-রসূলগণের পাশাপাশি যাদের পথ সবচেয়ে অনুসরণীয় তারা হলেন আল্লাহর রাসূল (সা)-এর সাহাবিগণ।
যারা সারা জীবন ইসলাম প্রচারে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ওই সমস্ত সাহাবিগণকে রাসুল (সা)-এর পরামর্শদাতা ও উপদেষ্টা নির্ধারণ করে তাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের আয়াত নাযিলের মাধ্যমে সাহাবাগণের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন:
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সঙ্গে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সিজদাকারি অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।’ (সূরা আল-ফাতহ, আয়াত : ২৯)।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করে বলেন: ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে অগ্রবর্তী সাহাবীগণ এবং কল্যাণকর্মের মাধ্যমে তাদের অনুসারীগণের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।’ (আত-তাওবাহ ১০০)।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘এই সম্পদ নিঃস্ব মুহাজিরগণের জন্য ও যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। অথচ এরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেন। এরাই তো সত্যবাদী। আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সূরা আল-হাশর, আয়াত : ০৮-০৯)
সাহাবিদের প্রশংসায় রাসুল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে তারাই সব চাইতে নেক লোক যাদের মাঝে আমি প্রেরিত হয়েছি।
অন্য বর্ণনায়, রাসুল (সা) বলেছেন: সবচাইতে সেরা মানব আমার সাহাবাগণ।
সামগ্রিক বিচারে সাহাবাগণ সকলে অন্য সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবারা নিজেরা কিন্তু সকলে একই স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-বিন্যাস ও স্তর রয়েছে। নিম্নে তাদের ক্রমধারা প্রদত্ত হলো:সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা।
-হযরত আবু বকর (রা)
-হযরত উমার (রা)
-হযরত উসমান (রা)
-হযরত আলী (রা)
এই চার খলিফার পরবর্তী স্তরে আছেন অবশিষ্ট আশারায়ে মুবাশশারাগণ। যারা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি বলে পরিচিত।
আশারা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দশ। আর মুবাশশারা শব্দের অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত। অর্থাৎ যারা দুনিয়ায় বেহেশেতের সুসংবাদ পেয়েছে তাদের আশারায়ে মুবাশশারা বা বেহেশেতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি বলা হয়।
তাদের সম্পূর্ণ তালিকা হলো :
-হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)
-হযরত উমার বিন খাত্তাব(রা)
-হযরত উসমান বিন আফফান (রা)
-হযরত আলী বিন আবি তালিব (রা)
-হযরত আবু উবাইদাহ বিন জাররাহ (রা)
-হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা)
-হযরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা)
-হযরত জুবাইর বিন আওম (রা)
-হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা)
-হযরত সাঈদ বিন যায়দ (রা)
এই দশজন সাহাবি সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি,তালহা জান্নাতি, জুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান জান্নাতি, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে যায়েদ জান্নাতি এবং আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) জান্নাতি। -তিরমিজি
এমনিভাবে মুহাজির সাহাবিবৃন্দ আনসারদের চেয়ে উত্তম। বদর যুদ্ধে ও বাইআতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীরা অন্যদের চেয়ে উত্তম। অনুরুপভাবে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সাহাবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments