নিউজবাংলা: ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার :
ঢাকা: এমপির লোক’ পরিচয়ে বাসায় প্রবেশ করে সবাইকে হাত-পা বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মনসুর আলীকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে

বলে অভিযোগ পরিবারের। পুলিশের দাবি, দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিল। প্রায় সাত-আট জনের একটি দল প্রবাসীর বাসায় ঢুকে পরিবারের সবাইকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ডাকাতি করে। বাইরে থেকে বাসায় ঢুকে বৃদ্ধ মনসুর আলীর চিৎকার করায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই করম আলী বাদী হয়ে সোমবার ভাষানটেক থানায় ডাকাতি ও হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে ১৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করলেও তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সোমবার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমেরিকা প্রবাসীকে খুন ও তার বাসায় ডাকাতির ঘটনায় আমরাও কিছুটা আশ্চর্য হয়েছি। কারণ, সন্ধ্যায় এরকম একটি ঘটনা ঘটতে পারে আমাদের ধারণাতেই ছিল না। আমরা আসামি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় আসামি অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। চারজন সন্দেহভাজনকে আটক করে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
নিহতের মেয়ের জামাই ডা. মনিরুজ্জামান সোমবার বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী চিকিৎসক। ছোট শ্যালিকা শ্বশুরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। পাঁচ বছর পর তারা দেশে আসেন। ওঠেন ভাষানটেকের এমপি চেকপোস্ট সংলগ্ন চতুর্থ তলার নিজস্ব বাড়িতে। শ্বশুরের ওই বাড়িতেই মনিরুজ্জামান তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। গত রবিবার পাশের একটি বাড়িতে ইফতারের দাওয়াতে যান মনিরুজ্জামানের শশুড় মনসুর আলী। ইফতারের শেষ পর্যায় ৩/৪জন অপরিচিত যুবক তাদের বাসায় আসে। তখন দরজা খোলাই ছিল। যুবকরা বলে ‘আমাদের এমপি সাহারা খাতুন পাঠিয়েছেন। আমরা সুমনকে খুঁজতে এসেছি। সুমন কোথায়?’ এসময় মনিরুজ্জামানসহ বাসার লোকজন বলেন, সুমন নামে কাউকে তারা চিনেন না। একথা বলার পরপরই আরও ৪/৫ জন বাসায় প্রবেশ করে সবাইকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রীকে চোখ বেঁধে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যায়। তার শ্বাশুড়ি ও ছোট শ্যালিকাকেও অন্য একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। এসময় দুর্বৃত্তরা ঘরের আলমিরার চাবি নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, ইউএস ডলার, ল্যাপটপ ও মোবাইলসহ প্রায় ১৩/১৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। লুট করা মামলামালের মধ্যে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ ছিল।
ডা. মনিরুজ্জামান আরও জানান, তার শ্বশুর বাসায় ঢোকার পরই ডাকাতদের সামনে পড়েন। তখন তাকেও বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে ডাকাতরা। তিনি ডাকাতদের কাছে পানি খেতে চান। এ সময় চিৎকার করে উঠলে ডাকাতরা তাকে ছুরিকাঘাত করেন বলে জানান মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, তার পাঁচ বছরের ছেলেকেও ডাকাতরা অন্য একটি ঘরে আটকে রাখে। ডাকাতরা রাত পৌনে ৮টার দিকে মালামাল নিয়ে চলে যায়। এরপর হাতের বাঁধন খুলে দেখেন মনসুর আলী উবুড় হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছেন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভাষানটেক থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিল। এমপি’র নাম ভাঙিয়ে তারা বাসায় প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তরা ডাকাতির জন্যই ওই বাসায় প্রবেশ করে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার ইফতারের পর ভাষানটেকের এমপি চেকপোস্ট সংলগ্ন একটি ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কয়েকজন ঢুকে মনসুর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করে।

নিউজবাংলা/একে