নিউজবাংলা: ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার :
খুলনা: বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংকে দেওয়া এক হাজার টাকার ১০টি বান্ডিলে একশ টাকার নোট পাওয়ার পর

বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টাকায় গরমিল থাকা বান্ডিলগুলোয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পিন খুলে তা পুনরায় লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হওয়ার আগে টাকার বান্ডিলের উপর লাগানো কাগজ এবং বান্ডিলের প্রথম ও শেষ টাকার গায়ে স্বাক্ষর থাকে। কিন্তু কয়েকটি বান্ডিলে তা নেই। এতে মনে হচ্ছে, গরমিলের কারসাজি সোনালী বাংকের ভল্ট থেকে করা হতে পরে।
সোমবার ঘটনার তদন্তে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এমন তথ্য দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এ দিন দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল জেলার উভয় ব্যাংক ঘুরে দেখেন। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তও সংগ্রহ করেন।
এদিকে, ওই ঘটনা তদন্তে সোনালী বাংকের বাগেরহাট (প্রধান) শাখা আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর ব্যাংক পাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবার শহরের রেল রোডে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট (প্রধান) শাখা থেকে ৫০ লাখ টাকা রেমিটেন্স আনে রাহাতের মোড়ে অবস্থিত রূপালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলযুক্ত ট্যাগ লাগানো ৫০টি এক হাজার টাকার বান্ডিল (পাঁচ প্যাকেট) নিয়ে রূপালী ব্যাংকে আসে। পর একটি প্যাকেটে থাকা ১০টি বান্ডিলে (প্রতিটি বান্ডিলে ১০০টি নোট থাকে) মোট ১১৮টি একশ টাকার নোট পাওয়া যায়।
বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে সোনালী বাংক বাগেরহাট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকে। রূপালী ব্যাংক বলছে, ঈদকে সমনে রেখে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ক্যাশ কর্মকর্তাসহ ওই ব্যাংকে কর্মরত একটি অসাধু চক্র পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এর আগে, তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল। সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশুতোষ মন্ডল সোমবার বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খান বাবুল রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।
তদন্ত কমিটি ব্যাংকের ভল্টে থাকা টাকার বান্ডিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। সোমবারের মধ্যে ভল্টে থাকা সকল বান্ডিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হবার কথা রয়েছে। তদন্তে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আশুতোষ মন্ডল।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা অফিসের যুগ্ম ব্যবস্থাপক (ক্যাশ) তুলসী দাস রায় ও উপ-ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার সরেজমিন উভয় ব্যাংকে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা টাকার বান্ডিলগুলো বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।
অন্যদিকে, রূপালী ব্যাংকের (খুলনা) ডেপুটি ম্যানেজার মৃধা ইউসুব আলী বাগেরহাট শাখায় এসে ভল্টে থাকা সব টাকার বান্ডিল পরীক্ষা করেন। পরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের কোনো দায় নেই। সোনালী ব্যাংক থেকেই কারসাজির এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এর কিছু প্রমাণও পেয়েছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংকসহ বাগেরহাটের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট (প্রধান) শাখার ক্যাশ ইনচার্জ আবুল খায়ের ও মো. নূরুল ইসলাম প্রায় এক মাস আগে একই ব্যাংকের চিতলমারী শাখায় রেমিটেন্স প্রদান করার পর সেখানে একইভাবে এক হাজার ও পাঁচশ টাকার বান্ডিলে একশ টাকার কিছু নোট পাওয়া যায়। এতে ঘাটতি হয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।
পরে ওই কর্মকর্তাসহ উভয় শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী যৌথভাবে নিজ পকেট থেকে ওই অর্থ ফেরত দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (খুলনা) যুগ্ম ব্যবস্থাপক (ক্যাশ) তুলসী দাস রায় বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকে পাঠানো বান্ডিলগুলো সঠিক ছিল। ২৭ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসা ২৫ কোটি টাকা বুঝে পেয়ে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট (প্রধান) শাখার কর্মকর্তারা লিখিত দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৫ সালের একটি ঘোষণা অনুযায়ী কোনো তফসিলি ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংক বা গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্যাগ ও লেভেল লাগানো টাকা দিতে পারবে না। কিন্তু সোনালী ব্যাংক তা মানেনি। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টাকায় গরমিল থাকা বান্ডিলগুলোয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পিন খুলে তা পুনরায় লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হওয়ার আগে টাকার বান্ডিলের উপর লাগানো কাগজ এবং বান্ডিলের প্রথম এবং শেষ টাকার গায়ে স্বাক্ষর থাকে। কিন্তু কয়েকটি বান্ডিলে তা নেই। এতে মনে হচ্ছে, গরমিলের কারসাজি সোনালী বাংকের ভল্ট থেকে করা হতে পরে।
তুলসী দাস রায় বলেন, আমরা বিষয়টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিউজবাংলা/একে