সামিউল হত্যা মিয়ে তসলিমা নাসরিন যা বললেন
নিউজবাংলা: ১৫ জুলাই, বুধবার :
ঢাকা: শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে হত্যার নির্মম ভিডিওচিত্র নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া জানালেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। নিজের ফেসবুক পাতায় দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি দাবি করেছেন, প্রজাতি হিসেবেই মানুষ এমন নৃশংস।
তসলিমা নাসরিন স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
বাংলাদেশের এক গ্রামে রাজন নামের একটা গরিব ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে কিছু লোক। পিটিয়ে মেরে ফেলার ভিডিও ওরা নাকি ফেসবুকেও দিয়েছে। ওদের নৃশংসতা দেখার আমার কোনও ইচ্ছে নেই, তাই ভিডিওর খোঁজ আমি করিনি।
আমি কিন্তু একথা বলার জন্য আসিনি যে ‘রাজনকে গরিব করেছে এই সমাজ, দোষটা রাষ্ট্রের। চুরি না হয় করেছে রাজন, তাই বলে মেরে ফেলতে হবে?’ আমি শুধু বলতে এসেছি, মানুষ নামক জাতটার জন্য বর্বরতা নৃশংসতা নিষ্ঠুরতা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। দুর্বলকে মেরে ফেলে মানুষের মতো কাজই করেছে ওরা। সবল মানুষ দুর্বল মানুষকে মারে। ধনী মানুষ গরিব মানুষকে মারে। পুরুষ মানুষ মেয়ে মানুষকে মারে। নানা কায়দায় মানুষ মানুষকে মারে। প্রতিদিন মারে। কেবল রক্ত গড়ালেই আর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হলেই কি মৃত্যু ঘটে? অনেকে মার খেতে খেতে মৃতবৎ বেঁচে থাকে। গোটা জগত জুড়ে মারামারি চলছে।
মানুষের মতো দেখতে কিছু ‘অদ্ভুত মানুষ’ মারামারি ঠেকাতে রূপকথার আশ্রয় নেয়, ঈশ্বরের ভয় দেখিয়ে মানুষকে শান্ত করে। তারা আইন বানিয়েছে, শাস্তির ভয় দেখিয়ে মানুষের রক্তপিপাসা কমায়। তারা ইস্কুল খুলেছে, মানুষকে খুনী না হওয়ার পরামর্শ দেয়। আজ যদি মানুষ জানে ঈশ্বর,ভগবান বা আল্লাহ বলে কিছু নেই, যদি জানে দেশে কোনও শাস্তির আইন নেই, মানুষ হত্যা করতে তারা আজই ঝাঁপিয়ে পড়বে। রক্তে ভেসে যাবে পৃথিবী। আমি বলতে চাইছি, মানুষ মূলত বর্বর,মূলত ভয়ংকর দানব। মানুষ অত্যন্ত নৃশংস বীভৎস প্রজাতি।
হাতে গোনা কিছু ‘অদ্ভুত মানুষ’ মানুষকে পরামর্শ দেয় স্বভাব চরিত্র বদলাতে, নৃশংসতা বন্ধ করতে। এ অনেকটা সাপকে ছোবল না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মতো। ওই অদ্ভুত কিছু মানুষ সভ্যতা নামে একটি শব্দ তৈরি করেছে, যেটির স্বাদ গন্ধ কোনওকিছুই মানুষের চরিত্রের সঙ্গে যায় না, তারপরও জোর জবরদস্তি তারা তা মানুষের ওপর চাপাতে চাইছে।
নিউজবাংলা/একে