নিউজবাং লা: ২০আগস্ট, বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: জন্মিলে মরিতে হইবে- এটা অমোঘ সত্য। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এ থেকে কারও নিস্তার পাওয়ারও সুযোগ নেই। কথাটা এ জন্য বলা যে, ক্রিকেটে যার অভিষেক হবে, তাকে তো একদিন ব্যাট-প্যাডটা তুলে রাখতে হবে।

এ থেকেও কি কেউ কখনও পালিয়ে বেড়াতে পারবে? কেউ কি পারবে, আজীবন খেলে যেতে? পারবে না বলেই একসময় এসে ‘বিদায়’ বলতে হয়, ‘বিদায়’ নিতে হয়। কুমার সাঙ্গাকারার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম তো হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু বিদায় তো অনেক ক্রিকেটারই নিয়ে থাকেন। ক’জনই বা পারেন, সমর্থকদের হৃদয়ে গভীর একটা চাপ রেখে যেতে? স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন ১৯৪৮ সালে। অবশেষে জীবন থেকেও বিদায় নিয়ে ফেলেছেন তিনি, ২০০১ সালে। কিন্তু এই কিংবদন্তী যে কাজ করে গেছেন, তার মধ্যেই অমর হয়ে রয়েছেন যুগের পর যুগ। এখান থেকে তো তিনি কখনওই বিদায় নিতে পারবেন না, পারেনও না।
ডন ব্র্যাডম্যান না হোন, কিন্তু কুমার সাঙ্গাকারা তো সে পর্যায়েরই একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেট ইতিহাসে যেভাবে স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম লিখে ফেলেছেন, সেখান থেকে তো তাকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। না পারবেন তিনিও? কর্মেই বেঁচে থাকবেন আজীবন, অনন্তকাল। এ কারণেই, ক্ষণজন্মা এসব ক্রিকেটারের ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার ঘোষণা যখন আসে, তখন ভক্তদের হৃদয়ে কোথায় যেন খোঁচা লেগে যায়। তাদের ভাবতে কষ্ট হয়, উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে আর দেখা যাবে না সাঙ্গাকারাকে! কিংবা শত প্রতিকুলতার মাঝেও দৃঢ়-মনোবল নিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের সব ছলা-কলা, কৌশলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যাট হাতে শাসন করে যাচ্ছেন সাঙ্গা- এমন দৃশ্যও আর দেখা যাবে না!
তবুও তো যেতে হয়। সেই যাওয়ার সূচনাটাই আজ কলম্বোর পি সারা ওভালে করে ফেললেন লংকান কিংবদন্তী কুমার সাঙ্গাকারা। সকালে যখন মাঠে নামছেন তিনি, তখন ব্যাট হাতে দু’পাশে দাঁড়িয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হলো সাঙ্গাকারাকে। এ সময় বেশ আবেগমথিই দেখা যাচ্ছিল তাকে। কোহলিদের বিপক্ষে মাঠে দাঁড়িয়ে কিপিং করে যাচ্ছেন এক মনে। কিন্তু, তবুও কোথায় যেন একটা করুন সুর বেজে যাচ্ছে। কেটে যাচ্ছে সব সুর-তাল-লয়। টেস্টটা শেষ দিন পর্যন্ত গড়ালে, এই পাঁচদিনই দেখা যাবে তাকে ক্রিকেট মাঠে। এরপর, শুধুই অতীত। অনন্তের অন্তহীন সীমানায় হারিয়ে যাবেন তিনি।
ফেয়ারওয়েল টেস্ট শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সাঙ্গাকারা। নিজের বেশকিছু অনুভূতির কথাও জানিয়েছেন তিনি। সে কথাগুলোই তার ভাষায় তুলে ধরা হলো বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য….
“গুডবাই বলা কখনওই সহজ নয়। জানি আমার শেষ টেস্টটা আবেগের হবে। এই পনেরো বছর শ্রীলংকার হয়ে খেলা আমার কাছে সম্মান আর সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিজেকে পরম ভাগ্যবান মনে করি। ক্যারিয়ারে যে সাফল্য আর সুযোগ উপভোগ করেছি তার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
কথাটা কিন্তু হালকা ভাবে বলছি না। কারণ আমি জানি শ্রীলংকা, ভারত বা এশিয়ার অন্যান্য দেশে এমন অনেক ক্রিকেটার আছে যারা আমার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যারা জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে পড়তে পারেনি।
আমি ভাগ্যবান কারণ আমার আবির্ভাব এমন একটা সময়ে, যখন কোচ ডাভ হোয়াটমোর আর ক্যাপ্টেন সনৎ জয়সুরিয়ার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের পুনর্গঠন চলছিল। দলে তাই তরুণদের জন্য জায়গা ফাঁকা ছিল। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘এ’ দলের কয়েকটা ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পেরেছিলাম। সেখান থেকে ওয়ানডে স্কোয়াডে ঢুকে পড়া আর নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পারা।
যাক, গত সপ্তাহের কথায় আসি। এই ক’টা দিন প্রচুর শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। বন্ধুবান্ধব, ফ্যান, সতীর্থ, মিডিয়া, প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রচুর ভালবাসা আর সম্মান পেয়েছি। ওরা যে গত কয়েক বছর ধরে আমার খেলা উপভোগ করেছেন আর আমার পাশে থেকেছেন, তার জন্য আমি আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। দিনের শেষে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের কাজই তো লোকের বিনোদন করা।
এই ম্যাচের আগের কয়েকটা দিন আবেগ-ভালবাসা-সম্মানের তোড়ে মাঝে মধ্যে অভিভূত লাগছে। তবু চেষ্টা করছি যত বেশি সম্ভব ফোকাস ধরে রাখার। আমার ম্যানেজমেন্ট টিমকে বলে রেখেছিলাম, এই ক’টা দিন আমার ডায়রিতে যেন কোনও মিটিং বা ইন্টারভিউ না রাখে। ওরা কথামতো আমার ডায়রি সম্পূর্ণ ফাঁকা রেখেছে। এই কয়েকটা দিন ট্রেনিংয়ে প্রচুর খেটেছি আর পরিবারের সঙ্গে রিল্যাক্স থেকেছি।
পরের পাঁচটা দিন আমার প্রধান লক্ষ্য হল প্রতি মিনিট উপভোগ করা। আর শ্রীলংকাকে সিরিজ জিততে যতটা সম্ভব সাহায্য করা। নিজের সামনে কোনও টার্গেট বা সেঞ্চুরি করার চাপ রাখছি না। প্রথম টেস্টে অপ্রত্যাশিত হারের পর পাল্টা লড়তে মুখিয়ে থাকা ভারতীয় দলের মোকাবিলা করার প্রস্তুতিই আমার একমাত্র ফোকাস।
গল টেস্টটা দুর্দান্ত ছিল, তাই না? টেস্ট ক্রিকেট যে কেন চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ, সেটা আবার দেখিয়ে দিল ম্যাচটা। দ্বিতীয় দিন শেষের দিকে আমাদের বোলারদের লড়াই বাদ দিলে প্রথম দু’দিন ভারত আমাদের ওপর পুরো কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল। তবে এই ফরম্যাটে নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। তাই চন্ডিমালের অসাধারণ ইনিংসের সৌজন্যে আমরাও খাদের কিনারা থেকে নিজেদের টেনে তুলতে পেরেছিলাম।
জিতে গল ছাড়তে পারলেও দল জানে, কলম্বোয় আরও অনেক উন্নতি চাই। প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটিং খুব খারাপ হয়েছে। সাধারণত যার ধাক্কায় লজ্জাজনক ভাবে হারতে হত। ভারতের প্রথম ইনিংসের শুরুতেও আমাদের বোলিংয়ে শৃঙ্খলা ছিল না।
পি সারা ওভালে ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ ভাবও টের পাই আমি। এ মাঠের পিচে এমনিতে বিনোদনের ক্রিকেট হয়। মনে হয় আগামী কয়েক দিনও তাই হবে। ফাস্ট বোলাররা এখানে সাহায্য আর বাউন্স পাবে। স্পিনাররা বল টার্ন করাবে। বল ভাল ব্যাটে আসবে আর আউটফিল্ড বেশ দ্রুত, তাই ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দে রান করবে।

নিউজবাংলা/একে