নিউজবাং লা: ২০আগস্ট, বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মান করেছিলেন তাজমহল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে নির্মিত স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে তাজমহল নিজ স্বকীয়তা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই সপ্তাশ্চর্য দেখতে ভারতে আসেন। শুধু পর্যটনের জন্যই নয়, তাজমহল এখন মানুষের সহজাত ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। যার সাক্ষর আমরা বিভিন্ন দেশে নির্মিত তাজমহলের রেপ্লিকা দেখলেই বুঝতে পারি।
কিন্তু যে ভারতে মুঘলরা একটি তাজমহল নির্মান করে গেছেন, সেই ভারতেই কেন ফাইজুল হাসান কাদরি নামের এক পোস্টমাস্টারকে আবার তৈরি করতে হলো নতুন এক তাজমহল। নতুন তাজমহলের অনুসন্ধানে আমাদের যেতে হবে উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বুলান্দশহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের গ্রাম কাসর কালানে। এই গ্রামেরই পোস্টমাস্টার হিসেবে গোটা জীবন কাটিয়েছেন ফাইজুল হাসান কাদরি। ১৯৫৩ সালে তাজামুল্লি নামে এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
বিবাহের পর থেকে বেশ সুখে শান্তিতেই জীবন কাটাচ্ছিলেন কাদরি দম্পতি। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন তাজামুল্লি বেগমের গলায় ধরা পরে দুরোরোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেও শেষমেষ ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন তাজামুল্লি। বিবি মারা যাওয়ায় একেবারেই বেসামাল হয়ে পরেন হাসান কাদরি। কারণ দীর্ঘ পোস্টমাস্টার জীবনে তিনি অগুনতি মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখের খবর ফেরি করে বেরালেও ঘরের মধ্যে তাজামুল্লিই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী ও বন্ধু। সেই চির আপনজন মারা যাওয়ার কষ্ট নিতে পারলেন না হাসান কাদরি। শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের জীবনের সকল অর্থ দিয়ে মৃত স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিনি কিছু এটা নির্মান করবেন।
যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। সকল অর্থ ব্যয় করে তিনি বিবি তাজামুল্লির স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করলেন মিনি তাজমহল। তিন বছর ধরে কাজ চলার পর এক সময় শেষ হয়ে গেল কাদরির সকল অর্থ, কিন্তু তখনও তাজমহলের কাজ অনেক বাকী। আর তখন শেষ সম্বল এক টুকরো জমি আর বিবির রেখে যাওয়া স্বর্ণ-রুপোর কিছু গহনাও দিলেন বিক্রি করে। বিক্রি করে পাওয়া সাড়ে সাতলাখ টাকা দিয়ে তিনি আজগর নামে স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রীর সহায়তায় কোনোমতে নির্মান কাজ শেষ করেন। কিন্তু এখনও মিনি তাজমহলের অলংকরণের জন্য যে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা দরকার তা তিনি জোগার করতে পারেননি।
হাসান কাদরির ভাষায়, ‘আসগর মূল ভবনটির উপরে মোট চারটি মিনার তৈরি করেছে, যেগুলো মোটামুটি ২৭ ফুট করে লম্বা। আমার নিজের ভূমিতেই এই কাঠামো নির্মান করা হয়েছে এবং আমি এর চর্তুপাশে গাছ লাগানোর চেষ্টা করছি এবং এর পেছনে একটি জলাধারও বানাবো। যদিও কাজ প্রায় শেষের দিকে, কিন্তু মারবেলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় বাকী কাজটুকু শেষ করা যাচ্ছে না। অনেকেই আমাকে টাকা দিতে চেয়েছেন কিন্তু আমি নেইনি। আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং নিজের ইচ্ছের ফসল হলো এই কাঠামো। তাই যা করার আমার নিজেরই করা উচিত।’
দবে সম্প্রতি জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট বিশাল সিং জানিয়েছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী কাদরির সঙ্গে দেখা করে কিছু অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিতে পারেন। কিন্তু কাদরির যে মানসিক অবস্থান তাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা নেবেন কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে গ্রাসবাসীর। স্ত্রীর স্মৃতি এবং ভালোবাসার প্রতি কাদরির একাগ্রতা টের পাওয়া যায় তার ভাইকে দেয়া বক্তব্যে, ‘আমি আমার ভাইকে বলে দিয়েছি যে, আমার মৃত্যু হলে যেন আমার স্ত্রীর পাশে আমাকে কবর দেয়া হয়। আমি ওয়াকফ বোর্ডে যাবতীয় ফি জমা দিয়ে দিয়েছি। সবকিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। আমার স্ত্রীও মারা গেছেন। আমিও কিছুদিনের মধ্যেই মারা যাবো। এই মনুমেন্টটিও চিরদিন দাড়িয়ে থাকবে না। আমি শুধু মৃত্যুর আগে এটাকে পূর্ণ হতে দেখতে চাই।’

নিউজবাংলা/একে