নিউজবাংলা: ২৩আগষ্ট,রোববার:

ঢাকা: কম্পিউটার ব্যবহার কারিদের জন্যে এক আতঙ্কের নাম ভাইরাস। তথ্য চুরি কম্পিউটরকে অকেযোসহ নানা সমস্যা তৈরি করে ভাইরাস।ভাইরাসের জন্যে পড়তে হয় নানা সমস্যায়।

আশির দশকের শুরুতে মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানি ফ্রেডরিক কোহেন ‘ভাইরাস’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন এমন কম্পিউটার প্রোগ্রামকে চিহ্নিত করতে যা নিজেই নিজের কপি করে এক কম্পিউটার থেকে আরকটিতে ছড়িয়ে পরতে পারে। তারপর থেকে কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে যেন ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হয়ে জড়িয়ে গেছে ভাইরাস শব্দটি।

কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এমন কয়েকটি ভাইরাসের এক তালিকা করেছে মিড-ডে ডটকম।

মিকেলঅ্যাঞ্জেলো

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবিষ্কার হয় এই কম্পিউটার ভাইরাসটি। ভাইরাসটি ডিজাইন করা হয়েছিল এমনভাবে যেন প্রতি বছরের ৬ মার্চ রেনেসা শিল্পী মিকেলঅ্যাঞ্জেলোর জন্মদিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায় এটি। উইন্ডোজের পূর্বসূরী ডস সিস্টেম আক্রমণের জন্য ভাইরাস বানানো হলেও, সহজেই অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম আর হার্ডড্রাইভের মাস্টার বুট রেকর্ডে সংক্রমণ ঘটাতে পারতো এটি।

কিছু কম্পিউটার ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দূর্ঘটনাবশত ওই ভাইরাস আক্রান্ত পণ্য বাজারজাত করে খবরের শিরোনাম হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তৎকালীন মিডিয়ায় ‘ডিজিটাল মহাপ্রলয়ের’ আশঙ্কা করা হলেও সর্বোচ্চ ২০ হাজার পিসি এর ভুক্তভোগী হয়েছিল ওই বছরে। পরের বছর ৬ মার্চে ব্যবহারকারীদের নিজের কম্পিউটার চালু না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্রিপার

ইতিহাসের প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় এটিকে। ১৯৭১ সালে বিবিএন টেকনোলিজসের বব টমাস পরীক্ষামূলকভাবে ক্রিপার ভাইরাসটি বানান। গণিতবিদ জন ভন নিউম্যানের তত্ত্ব পরীক্ষা করতে বানানো এ ভাইরাসটি টেনেক্স অপারেটিং সিস্টেমচালিত ডিইসি পিডিপি-১০ কম্পিউটারে সংক্রমণ ঘটান তিনি। পরে এই ক্রিপারকে মুছে ফেলতে রিপার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।

এল্ক ক্লোনার

১৯৮১ সালে মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার রিচার্ড স্ক্রেন্টা এ ভাইরাস বানান। তখন মোটে ১৫ বছর বয়সের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। অ্যাপল ২ সিস্টেমের জন্য তৈরি এই ভাইরাসটি মজা করার জন্য তৈরি হলেও ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পরেছিল।

ব্রেইন

পাকিস্তানের লাহোরে ১৯ বছর বয়সী প্রোগ্রামার বাসিত ফারুক আলভি আর তার ভাই আমজাদ ফারুক আলভির ১৯৮৬ সালে বানানো বুট সেক্টর ভাইরাস ‘দ্য ব্রেইন’ পাকিস্তানি ব্রেইন বা পাকিস্তানি ফ্লু নামেও পরিচিত। আইবিএমের পিসিতে চলার জন্য তৈরি ভাইরাসের মধ্যেও প্রথম এটি।

আইলাভইউ

এটি লাভ লেটার, ভিবিএস বা লাভ বাগ ওয়ার্ম নামেও পরিচিত। ২০০০ সালের ৫ মে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ উইন্ডোজ কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরেছিল এটি। ফিলিপাইনের এক কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের শিক্ষার্থীর বানানো এই ভাইরাসটি একটি অ্যাটাচমেন্টসহ ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরতো।

পিকাচু

পোকি ভাইরাস বা পিকাচু ভাইরাস নামে পরিচিত এ ভাইরাসটি প্রথম শিশুদের লক্ষ্য করে বানানো কম্পিউটার ভাইরাস। জাপানি কার্টুন চরিত্র পিকাচুর ছবির সঙ্গে একটি বিশেষ প্রোগ্রামড ফাইল ইমেইল করা হতো। এটি উইন্ডোজ ৯৫, উইন্ডোজ ৯৮ আর উইন্ডোজ মিতে আক্রমণ করে সি ড্রাইভ থেকে কনটেন্ট মুছে ফেলতে সক্ষম ছিল।

কনফ্লিকার

উইন্ডোজ ২০০০ থেকে শুরু করে উইন্ডোজ ৭ বেটা ওএস চালিত ৯০ লাখ থেকে দেড় কোটি কম্পিউটার শিকার হয়েছিল এই ভাইরাসটির। এর হামলার শিকার ফরাসি নৌবাহিনী, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, নরওয়ে পুলিশ বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফট এ ভাইরাস প্রতিরোধে কেবি৯৫৮৬৪৪ সফটওয়্যার প্যাচ ইসু করে।

ক্রিপ্টোলকার

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আবিষ্কার হওয়া এই ট্রোজান হর্স ভাইরাস কোনো কম্পিউটারে ঢোকার পর তার হার্ডড্রাইভের ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট করে তার ডিক্রিপশন কি ভাইরাস প্রোগ্রামারের কাছে পাঠিয়ে দিত। এরপর ওই প্রোগ্রামার এনক্রিপ্ট করা ফাইলের ডিক্রিপশন কির বদলে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ‘মুক্তিপন’ আদায় করতো।

রেজিন

২০১৪ সালে আলোচনায় আসে বিভিন্ন ভুয়া ওয়েব পেইজের মাধ্যমে ছড়ানো এই ট্রোজান হর্স ভাইরাস। একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে এটি চুপিসারে নিজের এক্সটেনশন ডাউনলোড করে নিত। এটি অ্যান্টি-ভাইরাসের মাধ্যমে শনাক্ত করাও কঠিন ছিল। ধারণা করা হয়ে থাকে এই ভাইরাসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য সাইবার নজরদারির উদ্দেশ্যে বানিয়েছিল।

নিউজবাংলা/একে