নিউজবাংলা: সোমবার, ২৯ জুন:

মো. নজারুল ইসলাম, মধুপুর (টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি:

বিপন্ন টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনের ভূমি যতটুকু রাহুর কবল থেকে রক্ষিত ততটুকু রাবার প্রকল্প ও ঔষধি বাগানের অবদান। শুধু রাবার প্রকল্পের অধীনে থাকা প্রায় ৮ হাজার একর জায়গা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থও আয় করছে। ঔষধি বাগানের অধীনে রয়েছে বনের ১২ একরের বেশি জমি।

বন অধিদফতর সূত্র জানায়, মধুপুর শালবন রক্ষার বিকল্প উপায় হিসেবে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) মধুপুর পীরগাছা মৌজায় ১৯৮৬ সালে ২ ফেব্রুয়ারি রাবার প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ১৯৮৬-৮৭ থেকে ১৯৮৯-৯০ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ কেটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ১০ একর জমিতে রাবার বাগান করা হয়। দুই পর্যায়ে ৭ হাজার ৯শ ৩৪ একর জমিতে ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাবার বাগান করা হয়। মধুপুর অঞ্চলে পীরগাছা, চাঁদপুর, সন্তোষপুর, কমলাপুর ও কর্নজোড়া এলাকায় ৫টি রাবার বাগান রয়েছে। এসব বাগানে রাবার উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৭ লাখ ২ হাজার ৯শ ৯৬টি। অনুৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪শ ৫৭টি। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে মধুপুর গড় অঞ্চলের ৫টি বাগানে রাবার উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৫২ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ৯শত ৪৭ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন বিক্রি করে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৪০ টাকা। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৩শ ১০ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ১ হাজার ২শ ৪০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন রাবার বিক্রি করে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ১৪০ টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে রাবার উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৬শ ৬৩ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন। ৯শ ৪৬ দশমিক ৭৬ মেট্রিক টন রাবার বিক্রি করে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪০ টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে রাবার উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৪৫ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ১ হাজার ২১০ দশমিক ১ মেট্রিক টন রাবার বিক্রি করে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ৭শ ১০ টাকা। সব ধরনের খরচ বাদে প্রতি বছর এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে উৎপাদিত রাবারের ৩০ শতাংশ চুরি হয়ে যায়। রাবার কর্তৃপক্ষ এসব চোরের দৌরাতœ্য বন্ধে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে মধুপুরের গড়ে চাড়ালজানী এলাকায় বন বিভাগের রাজস্য খাত থেকে ১টি ঔষধি বাগান করা হয়েছে। ২০০৩ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বৃক্ষরোপন আন্দোলন কর্মসূচীর আওতায় এই বাগানটি গড়ে তোলা হয়। বনের বিরান ১২ দশমিক ৩৫ একর জমিতে আমলকি, হরিতকি, বহেরা, চন্দন, দেবদারু, নীম, অর্জুন, উলটকম্বল সহ প্রায় ২০ প্রজাতির ঔষধি গাছ রোপন করা হয়। গাছগুলো বড় হচ্ছে তবে ফল দিতে আরও সময় লাগবে বলে সূত্র জানায়। আকারে ছোট ও ঔষধি গাছ হওয়ায় চোরদের নজর এদিকে পড়ে না। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় ২০০৭ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে জবর-দখল থাকা বন ভূমি উদ্ধার ও কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বনায়ন করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর গারোরা বেরিবাইদে বনায়নের জরিপকারী খোকন মিয়াকে মারপিট করে জিনিস পত্র ভেঙ্গে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ১৭ জনের নামে মামলা হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকার নৃ জনগোষ্ঠীর লোকেরা উৎসাহীত হয়ে সৃজিত চারা উত্তোলন শুরু করে। ৩ সপ্তাহের মধ্যেই ২২ লাখ চারা ধ্বংস করে ৩৬শ একর বনভূমি পূনরায় জবর দখল করে। মধুপুর রাবার প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হালিম সরকার বলেন, গাছশূণ্য জায়গায় ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এসব গ্রামে হাটলে মনেই হয়না এখানে কোন দিন বন ছিল। তিনি দাবি করেন ১৯৮৬ সালে রাবার প্রকল্প শুরু না হলে এতদিনে মধুপুর বন পুরোটাই জবর দখল হয়ে যেত। রাবার চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা রাবার সংগ্রহের পর যেটুকু মাটিতে পড়ে থাকে সেটুকু স্থানীয় গারোরা নিয়ে যায় কখনো কখনো বাঙালিরাও এ কাজ করে। এটিকে চুরি বলা যায় না। ঔষধি বাগান সম্পর্কে টাঙ্গালের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অসিত রঞ্জন সাহা বলেন পরিমিত পরিচর্যায় বাগানটি বেশ সুন্দর হয়ে ওঠেছে। আর ক’বছর গেলেই এর দীর্ঘ মেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে। তাৎক্ষনিক ভাবে এর সুফল হল ঔষধি বাগান এলাকায় গাছ চোর, দুর্বৃত্তদের দৌরাতœ্য নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজিক বনায়ন কর্মসূচী নয় বনবিভাগের আওতায় মধুপুর শালবনের গাছশুণ্য গাছগুলোতে ঔষধি বাগান করা যেতে পারে। একই সাথে বাগান থেকে সংগৃহিত ফুল, পাতা, বাকল, হারবাল, ঔষধ কোম্পানীগুলোতে সরবারাহ করার উদ্দোগ নেওয়া হলে বন যেমন রক্ষা পাবে তেমনি সরকার বিপুল অর্থ আয় করতে পারবে।

নিউজবাংলা/একে