নিউজবাংলা: সোমবার, ২৯ জুন:
ঢাকা: বলিউড রোমান্স কিং শাহরুখ খানের ছবির ‘চেন্নাই এক্সপ্রেসের’ একটি বিখ্যাত ডায়ালগ- ‘নেভার আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব এ কমন ম্যান’ (একজন সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে কখনো অবজ্ঞা করো না)। ডায়ালগটা আর সিনেমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলায় একজন চা বিক্রেতার জয় প্রমাণ করেছে সাধারণ মানুষের মতো ছবির ডায়ালগটিকেও।
রাজেশ সাকরে, ভারতের একজন চা বিক্রেতা। পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেন ভোক্তা আদালতে, যখন তিনি বুঝতে পারেন তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে নয় হাজার ২০০ রুপি হাপিস হয়ে গেছে। অবশেষে চার বছর পর জয় হয় সেই চা বিক্রেতারই।
সাকরের ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট ২০ হাজার রুপি ছিল। সেখান থেকে তিনি ১০ হাজার ৮০০ রুপি উত্তোলন করেন। কিন্তু পরে অন্য একদিন টাকা তুলতে এটিএম বুথে গিয়ে দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্টে বাকি যে নয় হাজার ২০০ রুপি থাকার কথা তা নেই।
সঙ্গে সঙ্গেই সাকরে ব্যাংকটির একটি শাখায় গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা তাঁকে এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা না করে উল্টো অভিযোগ করেন সাকরের ভুলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যাংকের কোনো দোষ নেই। দমে যাননি সাকরে। আপিল করেন ব্যাংকটির মুম্বাইয়ের প্রধান কার্যালয়ে। কাজ হয়নি তাতেও। তাই ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জেলার ভোক্তা আদালত ‘কনজ্যুমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল ফোরাম’-এ যান তিনি।
এখানে এসে আবার বিপত্তি। আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী ঠিক করার মতো রুপি ছিল না সাকরের কাছে। তাই তিনি শুনানির সময় নিজেই ব্যাংকের আইনজীবীদের সঙ্গে লড়েন।
ব্যাংকের আইনজীবীরা দাবি করতে থাকেন, সাকরেই উঠিয়ে নিয়েছেন এ রুপি। কিন্তু এ দাবির পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারলেন না তাঁরা। ছিল না কোনো সিসিটিভি ফুটেজ, ছিল না অন্য কোনো প্রমাণ। শুনানি চলতে থাকে। অবশেষে জয় হয় সাকরেরই।
এ বছরের ১৬ জুন ভোক্তা আদালত রায় দেয় সাকরের পক্ষেই। আদালত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া যেন ছয় শতাংশ সুদসহ সাকরের গচ্চা যাওয়া নয় হাজার ২০০ রুপি ফেরত দেন, সে আদেশ দেন। এ ছাড়াও গ্রাহককে মানসিকভাবে হয়রানি করার জন্য ১০ হাজার রুপি এবং সাকরের মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে দুই হাজার রুপি দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
এভাবেই জয় হলো সাধারণ মানুষের ক্ষমতার। সাকরের এই হার না মানা প্রচেষ্টা অনুপ্রাণিত করবে তাদের, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরও আইনের মারপ্যাঁচের ভয়ে নিশ্চুপ থাকে।