নিউজবাংলা: ৫জুলাই, রোববার:

ঢাকা: এ-ও এক ভিভিআইপি কুকুর। তবে ‘আননোন’ নয়। ক্লিনিকের খাতায় জ্বলজ্বল করছে তার নাম। ‘চাও ভাইসাহাব’।

 

তার মালিকের পরিচয়ও স্পষ্ট। এই শহরেরই এক গণ্যমান্য নাগরিক তিনি। চিকিৎসকের ক্লিনিকে উপস্থিত তাঁর পরিবারও। আর কুকুরটিও গোল্ডেন রিট্রিভার নয়, এ হল চাউচাউ। চলতি কথায় ‘চাইনিজ লায়ন ডগ’। ডায়ালিসিসের প্রয়োজন না হলেও, এর অসুস্থতা নেহাত কম জটিল নয়।

এক গোল্ডেন রিট্রিভারের ডায়ালিসিসের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছে, আর এই চাউচাউয়ের অসুস্থতা তোলপাড় করেছে তার মালিকের পরিবারকে। যার জেরে চেন্নাই থেকে দেশের এক নামী পশু শল্য চিকিৎসককে উড়িয়ে আনা হয়েছে কলকাতায়। এসএসকেএমের নথি খুঁজে ডায়ালিসিস প্রার্থী সেই কুকুরটির নাম জানা না গেলেও এই কুকুরটির পরিচয় নিয়ম মেনেই নথিভুক্ত হয়েছে চিকিৎসকের খাতায়। শনিবার সকালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও হয়েছে এই শহরেই। গুরুত্বের বিচারে তাই এই সারমেয়টিকেও যে হেলাফেলা করা যাবে না, তা মেনে নিচ্ছেন পশু চিকিৎসকদের অনেকেই।

আক্ষরিক অর্থেই দেখতে ছোটখাটো একটা সিংহের মতো। আর গোটা পৃথিবীতে একমাত্র এই ধরনের কুকুরদেরই জিভের রং ঘন নীল। এ হেন এক কুকুরের মালিক কোল ইন্ডিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান সুতীর্থ ভট্টাচার্য। সাড়ে তিন বছরের এই কুকুরটি গত বেশ কিছু দিন ধরেই খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। বারবার তার পিছনের পা মুড়ে যাচ্ছিল। বহু ডাক্তার, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানা গেল, এই অসুস্থতা সহজে সারার নয়। এর জন্য প্রয়োজন জটিল এক ধরনের অস্ত্রোপচার। খোঁজ নেওয়া হল, এই কাজে এ দেশে দক্ষ কারা আছেন। তাঁদের এক জনকেই চেন্নাইয়ে যোগাযোগ করে অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হল। এ দিন সকালে কুকুরটিকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলল সেই অস্ত্রোপচার। একাধিক স্ক্রু আটকে, পিন বসিয়ে, লোহার তার দিয়ে বেঁধে বিবিধ প্রক্রিয়ায় সোজা করা হল তার পা। জ্ঞান ফিরতেই দিব্যি চার পায়ে সটান দাঁড়িয়ে পড়ল সে।

পোষ্যের অসুস্থতা মানুষকে কতটা মরিয়া করে তুলতে পারে, তার প্রমাণ মিলেছে অল্প কয়েক দিন আগেই। রাজ্যের সেরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যখন এক কুকুরের ডায়ালিসিসের প্রাণপণ চেষ্টা চলেছিল। শেষ পর্যন্ত এক চিকিৎসকের আপত্তিতে ডায়ালিসিস হয় ঠিকই। তোলপাড় যা হওয়ার তা হয়েছিল বিস্তর। এ দিন মানিকতলার কাছে যে পশু চিকিৎসকের ক্লিনিকে এই চাউচাউটির অস্ত্রোপচার হল, সেই সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘পোষ্যকে ভালবেসে অনেকেই সাধ্যের বাইরে গিয়ে অনেক কিছু করেন। দেখছি তো বহু বছর। এই কুকুরটিকেই দেখুন। একটা অতি ব্যস্ত পরিবার কী ভাবে সব কাজ ফেলে এর শুশ্রূষার চেষ্টা করছে।

কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সুতীর্থবাবুর স্ত্রী অপরাজিতা ভট্টাচার্য তাঁর ছেলেকে নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই টানা এই ক্লিনিকে বসে ছিলেন। জানালেন, সাড়ে তিন বছর আগে এই নতুন সদস্যটি যোগ হয়েছে তাঁদের পরিবারে। তখন তাঁরা হায়দরাবাদে থাকতেন। হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার সময়ে গাড়িতে চাপিয়ে লম্বা পথ নিয়ে আসা হয়েছিল তাকে।

জানা গিয়েছিল, এসএসকেএম-কাণ্ডের সেই কুকুরটিকে নাকি ডায়ালিসিস করানোর জন্য বার দুয়েক চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাতায়াতের বিপুল খরচের জন্য পরবর্তী সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কলকাতার সরকারি হাসপাতালকেই বেছে নেন কুকুরের মালিক। ঘটনাচক্রে এই কুকুরের চেন্নাই কানেকশনও বেশ জোরদার। কারণ চেন্নাই থেকেই পশু চিকিৎসক এসে অস্ত্রোপচারটি করেছেন। নাম প্রকাশে ঘোরতর অনিচ্ছুক সেই চিকিৎসককে জানানো হয়েছিল এসএসকেএম-বৃত্তান্ত। সব শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমনও হয় নাকি? মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস করলে মানুষের যেমন ক্ষতি, তেমন কুকুরেরও তো ক্ষতি। কারণ প্রক্রিয়াই তো আলাদা। আপনাদের ওই গোল্ডেন রিট্রিভার এখন বেঁচে আছে কি না জানি না, তবে মানুষের হাসপাতালে ডায়ালিসিসের চেষ্টা হলে হয়তো ওই টেবিলেই সে মারা যেত। জেনে রাখুন, পশুদের শুধু ভালবাসলেই হয় না। ভালবাসার শর্তগুলোও মানতে হয়।’’

এ সব শুনে এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভালবাসার শর্ত না মানার যে কী ঝক্কি, সে তো আমরাই টের পাচ্ছি!’’

নিউজবাংলা/একে