নিউজবাংলা: ৭জুলাই, মঙ্গলবার:

ঢাকা : নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে মহান আল্লাহ্ তায়ালা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রবাসী আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের পর সর্বত্র ক্ষোভের ঝড় বইছে।

যুক্তরাষ্ট্রেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবাদের সরব হয়েছেন। এরই মধ্যে নিউইয়র্কে গত রোববার মুসল্লিদের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে ধর্মদ্রোহী গাফফার চৌধুরীকে। আওয়ামী লীগের একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গাফফারকে অতিথি করায় ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা অনুষ্ঠানে বাধা দেন। এক পর্যায়ে গাফফার অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছালে কয়েকশ’ লোক জুতা হাতে তার গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি দ্রুত প্রস্থান করেন।সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় রোববার বিকালে জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি সেন্টারে নিউইয়র্ক শাখা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার’ এর ব্যানারে গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানকার মুসলমানদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে শেষ মুহূর্তে এই পার্টি সেন্টার কর্তৃপক্ষ সমাবেশ আয়োজনে উদ্যোক্তাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন।পরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তড়িঘড়ি করে গোপনে কয়েকটি মিডিয়া নিয়ে নিউইয়র্কের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড আ্যাভিনিউতে অবস্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্য্যালয় (সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের বেজমেন্ট অফিসে) একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আছরের নামাজের পর-পর বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লীরা বিষয়টা জেনে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের অফিস ঘেরাও করে।মাত্র ৩০ মিনিটে সেখানে বিপূল সংখ্যাক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। আব্দুল গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের অফিসের নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে জড়ো হওয়া জনতা জুতা হাতে তাকে ধাওয়া দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে গাফফার চৌধুরীর গাড়ি দ্রুত ঘুরে পালিয়ে যায়।ঐ অফিসে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, পরে সাহায্যের জন্য পুলিশ কল করে। পুলিশের সহায়তায় লীগ কর্মীরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পুলিশের অনুমতি না থাকায় এবং উপস্থিতদের অভিযোগ শুনে পুলিশ গাফফার চৌধূরীর অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে। গাফফার চৌধুরীকে ধাওয়ার সময় জনতা বিক্ষোভ-স্লোগানে ফেটে পড়ে। এসময় নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম নবী ক্ষুব্ধ মুসল্লিদের হাতে লাঞ্ছিত হন।আওয়ামী লীগের সমাবেশ আয়োজকদের অন্যতম শরীফ সরকার বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ইতিপূর্বে যারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে, তাদের পক্ষ থেকে হুমকির কারণে তারা পার্টি হলে সমাবেশ করতে দিতে চাননি। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে ব্রুকলিনে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের মিলনায়তনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হলে এর সামনেও স্থানীয় মুসলমানরা সমবেত হয়ে গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘মুরতাদ’, ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার মৃত্যুদ-ের দাবিতে বিক্ষোভ করে। সমাবেশের জন্যে নির্ধারিত মিলনায়তনের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। গাফফার চৌধুরীসহ আয়োজকদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখে। তখন ভেতরে থাকা লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খরব পেয়ে আয়োজকদের অন্যতম নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে তারা কাছের মসজিদে চলে যান। ওই সময় নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গেলে কর্মকর্তার সামনেই বেশ কয়েকজন তার উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশ উভয় পক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন কিছু করতে নিষেধ করলে সেখানেও গাফ্ফার চৌধুরীর সমাবেশ আর হয়নি।এর আগের দিন নিউইয়র্ক সিটির অ্যাস্টোরিয়ায় ‘মদিনার আলো’ নামের একটি সংস্থার আয়োজনে তারাবির নামাজ শেষে ইমাম মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, নাস্তিক মুরতাদ গাফ্ফার চৌধুরীর শাস্তি চান এখানকার সকল মুসল্লি এবং তাকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে ঢিল ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে বলে দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ বলেন, অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন গাফ্ফার চৌধুরী। এর শাস্তি তাকে ভোগ করতেই হবে। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। নিউইয়র্কে বেশ কটি মসজিদের ইমামসহ বিক্ষোভকারীরা যেখানে গাফ্ফার চৌধুরী- সেখানেই প্রতিরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা হেলালউদ্দিন, স্থানীয় বায়তুল জান্নাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, বাংলাদেশী আমেরিকান প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম, মো. শহীদুল্লাহ, মাওলানা সাফায়েত ও মাহবুবুর রহমান। বক্তারা বলেন, ‘আজকের প্রতিবাদ কোন রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়। এ প্রতিবাদ, নাস্তিক গাফ্ফারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদকারীরা ‘গাফফারের চামড়া তুলে নেব আমরা, ‘যেখানে গাফফার-সেখানেই প্রতিরোধ’- এই স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিবর্তনের ইতিহাস বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে ভাষা ও ধর্মের ভিন্নতা তুলে ধরতে গিয়ে কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘এখন যেটাকে আরবি ভাষা বলা হচ্ছে, সেই ভাষাতে কাফেররাও কথা বলতো। আজকে আরবি ভাষার যে সমস্ত শব্দ আমরা ব্যবহার করি, সবই কাফেরদের ব্যবহৃত ভাষা। “যেমন আমরা বলি, আল্লাহর ৯৯ নাম, সবগুলোই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের ভাষা ছিল। রাহমান, গাফ্ফার ও গফুর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত নাম ছিল। এখন সেগুলো ইসলাম ‘এডপ্ট’ করেছে। আজকে বাংলা ভাষায় ‘এডপ্টিং’ শক্তি আছে যে, বাংলা ভাষাকে আজকে দেখতে পাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা এবং এই ভাষায় আরবি, ফার্সি থেকে শুরু করে যে কোন প্রকার ভাষা ‘এডপ্ট’ করা যায়।” জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে এ মোমেন বলেন, “গাফ্ফার চৌধুরীর এ বক্তব্য বাংলাদেশের কোনো কোনো দৈনিকে যথাযথভাবে প্রকাশিত না হওয়ায় তা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।” এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ওই বক্তব্যে ‘আল্লাহকে কটাক্ষ’ করা হয়েছে দাবি করে এজন্য তার নিন্দা জানিয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

নিউজবাংলা/একে