নিউজবাংলা: ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার :

ঢাকা: এবারো ঈদবোনাস থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন দেশের ৪০ লাখ পরিবহন শ্রমিক। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও শ্রমিকদের ঈদবোনাস দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।

পরিবহন শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের লাখ লাখ টাকা দিতে পারলেও শ্রমিকদের ঈদ উৎসব ভাতা দিতে অপারগ মালিকেরা। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলে এলেও শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। শ্রমিকেরা বলেছেন, ‘যেখানে মালিকরাই এখন শ্রমিক নেতা সেজে বসেছেন, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে কে কথা বলবে’? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেশির ভাগ শ্রমিক নেতার এখন নিজস্ব পরিবহন রয়েছে। শুধু পদ-পদবি ধরে রাখতেই তারা শ্রমিক নেতার লেবাস নিয়ে আছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবহন শ্রমিকেরা বছরের পর বছর চাকরি করলেও তাদের বেশির ভাগেরই নেই কোনো নিয়োগপত্র। চাকরি করেন দিনমজুর হিসেবে। মালিকের ইচ্ছায় তারা কাজ করেন। এ দিকে বোনাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, মহাখালীতে বোনাস দেয়া হয়। অন্য কোথাও দেয়া হয় কি না জানি না। অন্য দিকে বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো: আলী রেজা বলেন, ঈদের আগে বোনাস দেয়া না হলে সড়ক পরিবহন শিল্প যেকোনো সময় অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, কাভার্ডভ্যানসহ পরিবহন সেক্টরে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। এরা হলেনÑ চালক ও হেলপার। পরিবহন সেক্টরে এরা চাকরি করলেও ঈদের বোনাস তারা কখনো পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে পরিবহন মালিকেরা ঈদের দিনের উপার্জিত অর্থ না নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ভাগ করে দেন। এটিকেই তারা বোনাস হিসেবে ধরে নিতে বলেন। বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কোনো দিনই তারা ঈদবোনাস পাননি। শ্রমিকরা বলেন, ঈদের দিনও বাধ্য হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। না হলে ঈদ আর হয় না। ওই দিন যে টাকা পান তা দিয়েই স্ত্রী-সন্তানদের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা করতে হয়। আবার অনেকে ওই দিনের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত। ঈদের দিনেও তাদের রাস্তায় থাকতে হয় গাড়ি নিয়ে। পরিবার-পরিজনের সাথে তাদের আর ঈদ করা হয় না। পরিবহন শ্রমিকেরা বলেন, তারা মানুষের সেবা করেন। তাই ঈদের দিনেও তারা ছুটি নিয়ে ভাবেন না। তাই বলে কি তাদের কোনো ঈদের আনন্দ থাকবে না?

পরিবহনের একাধিক শ্রমিক বলেছেন, নেতাদের কারণেই তাদের এই পরিণতি। শ্রমিক সংগঠনগুলোর বেশির ভাগ নেতাই এখন মালিক। প্রভাবশালী অধিকাংশ নেতাই এখন একাধিক পরিবহন ও পরিবহন কোম্পানির মালিক। এমনকি শ্রমিকদের নেতা সেজে মন্ত্রী এমপিও হয়েছেন অনেকে। মন্ত্রী, এমপি হওয়ার পরেও তারা নিজেদের শ্রমিক বলে পরিচয় দেন। আর তাদের কারণেই প্রকৃত শ্রমিকেরা হচ্ছেন বঞ্চিত। একাধিক শ্রমিক বলেন, শ্রমিক নামধারী রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-এমপি এবং পরিবহন মালিকদের কারণেই প্রকৃত শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের কাছে এখন শ্রমিকেরা মুখ্য নয়, মুখ্য তাদের ব্যবসায়। আর প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য এখনো শ্রমিক নেতা হিসেবে রয়েছেন। এমনও নেতা রয়েছেন যারা কোনোকালেই পরিবহন শ্রমিক ছিলেন না। শ্রমিক নেতা পরিচয়েই তারা প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তাদের শক্তির উৎস্য হচ্ছে এই সেক্টরের নিরীহ মালিক-শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদা। সেই টাকায় তারা বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন। শ্রমিকেরা বলেন, এসব নেতার কারণেই তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হয় না। ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: আলী রেজা বলেন, সম্প্রতি তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে আবেদন নিবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ঈদবোনাসেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, বোনাস না পেয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় এই শিল্পে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

আলী রেজা বলেন, কোনো কালেই শ্রমিকেরা ঈদবোনাস পায়নি। যারা মানুষকে ঈদ উৎসব উদযাপনে সহায়তা করে তারা নিজেরা কোনো দিনই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারেন না। তিনি বলেন, শ্রমিকেরা চাকরি করলেও তাদের নিয়োগপত্র নেই। এটি শ্রম আইনের লঙ্ঘন।

এ দিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, মহাখালী টার্মিনালের শ্রমিকদের ঈদবোনাস দেয়া হয়। বাকিরা পায় কি না জানা নেই তার।

 

 

নিউজবাংলা/একে