বিশ্বনাথে ছাত্রদের ভালবাসায় বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন শিক্ষক লিয়াকত আলী

নিউজবাংলা: ২৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার:

মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:

একটি মানবিক আবেদন ১ দিনের মধ্যেই পাল্টে দিয়েছে একজন শিক্ষকের জীবনের মোড়। অথচ ১ দিন আগেই যার টাকার অভাবে চিকিৎসা তো দূরের, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাটা ছিল অনেক কঠিন কাজ ।

কিন্তু আজ সেই শিক্ষকের কিছু প্রাক্তন ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা একজন শিক্ষক বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন। সে দিন ফেইসবুকে আমার নিজস্ব আইডি থেকে রাত্রি ১১ টার কিছু পরে সংবাদটি ছাড়ার পর পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রায় ৪ লক্ষ টাকার প্রতিশুুতি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাচের পক্ষে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে।

 

সিলেটের বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক লিয়াকত আলীর চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে মোট ৫ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা । তার মধ্যে ১৯৯৯ ব্যাচ ১লক্ষ, ১৯৯৪ ব্যাচ ১লক্ষ ১০ হাজার, বিশ্বনাথ উন্নয়ন সংস্থা ইউ কে ৫০ হাজার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মফজ্জুল আলী, কদর মিয়া, আজাদ মিয়া, গুলজার আহমদ ১৫ হাজার, অজ্ঞাত ১ হাজার, রফিক আলী মেম্বার ( বিশ্বনাথেরগাঁও ) ৫ হাজার, ফজলু মিয়া (পূর্ব চান্দশীরকাপন) ৫ হাজার, মরহুম শাহ নেছার আলী(প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়) এর পুত্ররা ২০ হাজার, ১৯৯৫ ব্যাচ ২ লক্ষ টাকা, বিশ্বনাথ সোসিয়াল ডেভোলাপমেন্ট ট্রাস্ট ৫০ হাজার টাকা, আব্দুল খালিক কালাম (বিশ্বনাথেরগাঁও) ৫ হাজার, সিরাজ মিয়া (বিশ্বনাথেরগাঁও) ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেছে।

আগামী সপ্তাহে প্রদান করা হবে আরো ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা তার মধ্যে বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ১ লক্ষ , ১৯৯১ ব্যাচ ৬০ হাজার , ১৯৯৩ ব্যাচ ১ লক্ষ ও ১৯৯৮ ব্যাচ ১ লক্ষ টাকা প্রদান করবে বলে জানা গেছে। একজন শিক্ষকের জন্য এ এক অভূতপূর্ব ভালবাসার নিদর্শন ।

ছাত্র শিক্ষকের এই ভালবাসার গল্পের শুরুতে ছিল অনেকটা চমকপ্রদ ও নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ এক ঘটনা । বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের অসুস্থ প্রাক্তন শিক্ষক মোঃ লিয়াকত আলীর অসুস্থতার সংবাদ বর্তমানে বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেইসবুকে প্রথম প্রচার করেন তার এক প্রাক্তন ছাত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশ্বনাথের কারিকোনা গ্রামের মোঃ আব্দুল হামিদ টিপু । তিনি সেই পোষ্ট অসুস্থ শিক্ষকের জন্য দোয়া চান। অনেকেই দ্রত এ সংবাদটি শেয়ার করায় সবাই বিষয়টি জানতে পেরে একে অপরের সাথে পরামর্শ করতে থাকেন। এরই মাঝে সূদূর প্রবাস থেকে আমার সাথে অনেকেই যোগাযোগ করেন স্যারের বতর্মান শারিরীক অবস্থা জানতে। এরকমই এক টেলিফোন আসল আমার কাছে, তখন পাশে বসা ছিলেন রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আব্দুল বারী। সূদূর প্রবাস থেকে স্যারের এক ছাত্র জানতে চাইলেন, কেউ চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে কি না ? স্যারের আর্থিক অবস্থাই বা কেমন ? দরদী মন নিয়ে স্যারের জন্য ছাত্রদের এই আগ্রহ ও মায়াভরা কৌতুহল যে কারো হৃদয় ছুয়ে যাবে নিঃসন্দেহে । তখন দুজনে মিলে তারিখ এবং সময় নির্ধারণ করে একদিন হাজির হই স্যারের বাড়ীতে । এখানে উল্লেখ্য যে, আমি এবং বারী ভাই দুজনেই সরকারী স্যারের ছাত্র ছিলাম। সূদূর প্রবাস থেকে আমি ও বারী ভাইর সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের আগ্রহ আমাদেরকে দারুনভাবে উজ্জিবিত করে। যাদের নাম না বললে নিজেকে বড় অপরাধী বলে মনে হবে । তারা হলেন রাজনগর গ্রামের আতাউর রহমান, জানাইয়া গ্রামের আজিজুল ইসলাম সুহেল কারিকোনা গ্রামের আব্দুর রহিম রঞ্জু, আব্দুল হামিদ টিপু, সুহেল মিয়া, চান্দশীরকাপন গ্রামের খালেদ খান, অলংকারী গ্রামের জাকির হোসেন কয়েছ, মজলিশ ভোগশাইল গ্রামের রুহুল আমীন, ইলামেরগাঁও গ্রামের আবু সালেহ মোহাম্মদ মনসুর, বিশ্বনাথেরগাঁও গ্রামের কামাল উদ্দিন প্রমূখ ।

আর এই গল্পের মহনায়ক তো তারাই যারা মানবতার ডাকে এগিয়ে এসে একজন শিক্ষকের চিকিৎসায় বিপুলভাবে সাড়া দিয়ে বিশ্বনাথে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন । আমি আমার সেই দিনকার সেই মানবিক আবেদন বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার করে ও পরবর্তী প্রতিটি পদক্ষেপে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের যে সকল ভাই সহযোগিতা করলেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি । তারা হলেন বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন কয়েছ, বর্তমান সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সহ-সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু, সাধারণ সম্পাদক কাজী মোঃ জামাল উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী শিপন, সাবেক কোষাধ্যক্ষ প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, শহীদুর রহমান,অসিত রঞ্জন দেব, কার্যকরী পরিষদ সদস্য নুর উদ্দিন, সদস্য আব্দুস সালাম, মোঃ জামাল মিয়া ,মোঃ আবুল কাশেম।

সেই সংবাদে যা ছিল চিকিৎসার অভাবে মরতে বসেছেন সিলেটের বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মোঃ লিয়াকত আলী । টাকার অভাবে চিকিৎসাতো দূরের কথা , স্ত্রী ও ছোট্ট শিশু পুত্রকে নিয়ে বেচে থাকাটা তার জন্য এখন কঠিন হয়ে পড়েছে । অথচ সূদূর প্রবাসেই তার শত শত প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। এই অবস্থায় একজন শিক্ষক এভাবে টাকার অভাবে চিকিৎসা না করিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন , এর দায় কি প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা এড়াতে পারেন ! বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন সময় মত চিকিৎসা না হলে দ্রত তিনি সম্পূনভাবে পগু হয়ে যাবেন এবং তখন তাকে বাঁচানোটা হয়ত আর সম্ভব না ও হতে পারে। মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করলে হয়ত বাঁচানো যাবে একজন শিক্ষককে।

সম্প্রতি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোসিয়াল মিডিয়া ফেইচবুক এর কল্যানে শিক্ষক লিয়াকত আলীর অসুস্থতার কথা জেনে সূদূর প্রবাস থেকে তার কিছু প্রাক্তন ছাত্র তাদের প্রিয় শিক্ষকের বর্তমান শারিরীক অবস্থা জানতে আমাদের কাছে একাধিক ফোন করেন । এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার সন্ধায় আমি ( বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব এর সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক মাসিক বিশ্বনাথ ডাইজেস্ট ) ও রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল বারী বিশ্বনাথ ইউনিয়নের মন্ডলকাপন গ্রামে স্যারের বাড়ী যাই। জানাগেছে ২০১৪ সালের নভেম্বরে হঠাৎ করে স্ট্রোক করলে তার সম্পূর্ন দেহের অর্ধেক অংশ পুরোপুরিভাবে প্যারালাইসড হয়ে যায় । সময়মত বন্দু সিরাজ ( বিশ্বনাথেরগাঁও গ্রামের ব্রিটেন প্রবাসী )ও অন্যান্য বন্দু-বান্দব এবং আত্মীয় স্বজনের আর্থিক সহযোগিতায় চিকিৎসার কাজ শুরু করেন । একসময় চিকিৎসার জন্য আরো টাকার প্রয়োজন হলে উপায়ান্তর না পেয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্টানের সব মালামাল বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেন। তখন নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়ার ফলে বর্তমানে তাকে আর বিছানায় পড়ে থাকতে হয়না । তবে দেহের অর্ধেক অংশ এখনও প্যারালাইসডরয়ে গেছে এবং অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। জানাগেছে এখন টাকার হবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়াছেনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অল্প একটু জায়গায় উপর টিনশেডের দুটি রুমে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে প্রতিনিয়ত দ্রারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে অনেকটাই ক্লান্ত একসময় সততার যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া এই শিক্ষক । এখন প্রতি সপ্তাহে নূন্যতম ১০ হাজার টাকা তাদের প্রয়োজন ঔষধ , ফিজিওথেরাপি এবং সংসার খরচ চালানোর জন্য । কিন্তু জানেন না কোথায় থেকে আসবে এ অর্থ ? তার চিকিৎসার ব্যাপারে প্রাক্তন ছাত্রদের আগ্রহের কথা জানালে , শুধু অবাক বিস্ময়ে কেবল তাকিয়ে রইলেন ! স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মনের কথা প্রকাশ করতে না পারলেও , তার চোখের চাহনি বলে দেয় ছাত্রদের আগ্রহের কথা শুনে কৃতজ্ঞতায় তার মনে ক্ষনিকর জন্য হলেও প্রশান্তির আমেজ এনে দিয়েছিল। আর তার ১০ ও ৫ বছরের ২ শিশু পুত্র যখন বুঝতে পারে তার বাবার চিকিৎসা এবার হবে, তাদের বাবা আবার ভাল হয়ে যাবেন । তখন তাদের মুখে দীর্ঘদিন পর হাসির যে ঝিলিক দেখা গেছে তখন উপস্থিত অনেকেরই চোখে জল আটকাতে পারেননি ।যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন অন্তত এক বৎসর নিয়মিতভাবে ঔষধ সেবন ও ফিজিওথেরাপি করবেশী সম্ভাবনা রয়েছে তিনি সম্পূর্ন রুপে সুস্থ হয়ে যাবেন । এর জন্য নূন্যতম প্রয়োজন ৫ লক্ষ টাকা । রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের নূন্যতম ৪০ জন ছাত্র যদি ১০০ পাউন্ড করে সহযোগিতা করেন তাহলে অনায়াসেই এবং

খুবই দ্রত প্রয়োজনীয় এ অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব আপনাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রতিশুুতিবদ্ধ । কেউ চাইলে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে ও জমা দিতে পারেন । উত্তরা ব্যাংক , বিশ্বনাথ শাখা । একাউন্ট নম্বর ৬০৮৬ ( স্যার বর্তমানে একাউন্ট পরিচালনা করতে অক্ষম বিধায় তার নামীয় একাউন্টই তার স্ত্রী পরিচালনা করেন। মানুষ মানুষেরই জন্য আর জীবন জীবনেরই জন্য । তাই একটি জীবন বাঁচাতে রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা আমাদের সকলের ।

নিউজবাংলা/একে

Share This:

Comments

comments

Next: বাংলাদেশের বিপক্ষেই শুরু হয়েছিল ধোনির যাত্রা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*