ভিন্নদিকে দৃষ্টি ফেরাতে তারেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট
নিউজবাংলা: ২৮আগষ্ট, শুক্রবার:
ঢাকা: গুম, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, শিশু হত্যা, নারী নির্যাতন ও নিত্যপণ্যের মূল্যে বৃদ্ধিতে মানুষ যখন অতিষ্ঠ ঠিক তখনই মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে সরকার মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের করা সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গাজীপুরে নাশকতার মামলায় চার্জগঠনকে আষাঢ়ে গল্প বলেও দাবি করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করা হয়।
সাংবাদিকদের কাছে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নিন্দা জানিয়ে তিনি সরকারকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যখন লাখো বন্যার্ত মানুষ সরকারি ত্রাণ ও সহায়তার অভাবে বিপন্ন, পেঁয়াজ-মরিচসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ যখন অতিষ্ঠ, সরকারি দলের এবং জোটের অভ্যন্তরীণ বিবাদে সরকার যখন বিব্রত ঠিক তখনই জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর অপচেষ্টা হিসাবেই তারেক রহমানকে কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করে মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, জনগণ সরকারের এসব ষড়যন্ত্র বুঝতে পারে।”
সম্প্রতি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় চার্জগঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত পরশু টেলিভিশনে দেশবাসী এই ভাদ্র মাসে এক আষাঢ়ে গল্প শুনেছেন এবং গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় তা পড়েছেন। ক্রস ফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর যেসব গল্প বলা হয় তা যেমন দেশবাসী বিশ্বাস করেনা- তেমনি এই আষাঢ়ে গল্পও বিশ্বাস করেনা। তারপরেও সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তারা রাজনীতিকে কলুষিত, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেয় এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে আসীন জিয়া পরিবারের প্রতি সরকারি বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার প্রকাশ ঘটেছে গত পরশু গাজীপুর আদালতে দাখিল করা এক কল্পিত কাহিনীসমৃদ্ধ চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “চার্জশিটের ১৯ নং আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জয়দেবপুর থানার ১৮ কিলোমিটার দূরে মনিপুর খাসপাড়া এলাকায় তারেক জিয়া মোড়ে বাস পোড়ানোর ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২১ জানুয়ারি সংঘটিত ওই ঘটনার উপস্থিত সাক্ষীদের বর্ণনা অনুযায়ী ১৮ জনকে আসামি করে পুলিশ যে এফআইআর দাখিল করেছিল সেখানে তারেক রহমানের নাম নেই। অন্যান্য অজ্ঞাত ৪০/৪৫ জনের মধ্যে তার নাম আনা হয়েছে।”
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “যিনি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তিনি কি করে অজ্ঞাত আসামিদের একজন হতে পারেন? চার্জশিট বলা হয়েছে, তিনি লন্ডনের এক বাসায় বসে তার এক ব্যক্তিগত সহকারী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়রের পুত্রকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।”
এছাড়া তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী বলে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা ও একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি কখনও জনাব তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন না, এখনও নেই। তিনি কিংবা মেয়র পুত্র মঞ্জুরুল আহসান রনি কেউই বিএনপির কোন পর্যায়ের কোনো নেতা নন। কথিত আসামিরাও বিএনপি কিংবা কোনো অঙ্গসংগঠনের পরিচিত নেতা-কর্মী নন। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাদেরকে দলের নেতা বলে জানেন না।
নজরুল ইসলাম বলেন, “ওই অঞ্চলের জনগণ ভালবেসে একটা গ্রামীণ রাস্তার মোড়কে তারেক জিয়া মোড় বলে ডাকে। ওই মোড়ের নামের সঙ্গে তারেক রহমানের নামের উল্লেখ না থাকলে হয়তো তাকে জড়িয়ে এমন গল্প সাজানের কথা সরকারের মাথায় আসতো না।”
তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আপনারা কেউ জনাব তারেক রহমানের বক্তব্য ছাপাতে কিংবা প্রচার করতে পারেন না। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, সরকারি দল ও জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে এবং দেশের পত্রপত্রিকায় নিয়মিত তা ছাপা হচ্ছে। অথচ তার জবাব দেয়ার মৌলিক মানবাধিকার তারেক রহমানের নেই। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিককে এমন এক তরফা নিন্দা ও অপবাদের অসহায় শিকার করার দৃষ্টান্ত সভ্য বিশ্বের কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, পাকিস্তান আমলে এমন করে রাজনীতিবিদদের মুখ বন্ধ করার কথা শুনেছি; জরুরি অবস্থা, একদলীয় স্বৈরশাসন কিংবা সামরিক স্বৈরশাসনে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রতিবাদের ভাষা রুদ্ধ করার চেষ্টাও আমরা দেখেছি। কিন্তু দেশে যখন গণতন্ত্র আছে বলে দাবি করা হচ্ছে তখন মত প্রকাশের এমন অসম পরিস্থিতির যৌক্তিকতা নৈতিক বিচার কতটা গ্রহণযোগ্য এটাই বড় প্রশ্ন।”
জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচনী প্রহসন করে বর্তমান সরকার ক্ষমতার মসনদে বসে আছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, “তাদের ক্ষমতার নৈতিক ভিত্তি নেই এবং এই ক্ষমতা দখলের রাজনীতির প্রতি জনগণের সমর্থনও নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও কখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আর জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। সেই লক্ষেই আমরা অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।”
এসময় লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিটকে কাল্পনিক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে যতদিন পর্যন্ত তারেক রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করতে না পারবেন ততদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাও প্রচার ও প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে সরকার সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে পরে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানানো হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মো. শাহজাহান প্রমুখ।
নিউজবাংলা/একে