নিউজবাংলা: ২৭আগষ্ট, বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: রংপুর: আটকের সাত মাস পর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর যুব ইউনিটের সভাপতি আব্দুল বাছেত মারজানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

 

বাসে পেট্রোলবোমা হামলা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের দিন সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাসহ ১৪টি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তবে পরিবারের অভিযোগ, ছয় মাস ২৬ দিন আগে ঢাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মারজানকে আটক করা হয়। পরিবারের এমন দাবি নাকচ করে পুলিশ বলেছে, বুধবার ভোরে উপজেলার গড়রেরমাথা নামক স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বাংলামেইলকে জানান, বুধবার রাতে জামায়াত নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত মারজানকে মিঠাপুকুরের গড়েরমাথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাতে মিঠাপুকুরের জায়গীর বাতাসন এলাকায় বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় ছয় জনকে হত্যা, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিন সংঘর্ষে সাত জন হত্যাসহ ১৪টি সন্ত্রাস ও নাশকতার মামলা রয়েছ।
ওসি আরও জানান, মারজান মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট আছে। ছয়টি চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি মামলার শুনানি চলছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে মারজানের স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি বাংলামেইলকে জানান, মিঠাপুকুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে একজন ভালো মানুষ ও নেতা হিসেবে পরিচিত আব্দুল বাছেত মারজান। উপজেলা পরিষদের কাজে ঢাকায় গেলে সেখান থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মোহাম্মদপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তিনি আরও জানান, স্বামীর সন্ধান দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে তাকে থানায় সোপর্দ কিংবা নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান তিনি। অবশেষে আল্লাহ তাদের সহায় হয়েছেন। তবে পুলিশ নাটকীয়ভাকে ১৪টি মামলায় মারজানকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এ সময় তিনি তার স্বামীর নিঃর্শত মুক্তি দাবি করেন।
মারজানের মেয়ে ইসমাত ওয়ারা সাবিহা জানায়, তারা বাবা একজন জননেতা। জনগণকে নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতেন। যেটুকু সময় পেতেন সেটুকুতেই তাদের আদরে আদরে ভরিয়ে রাখতেন। বাবার সঙ্গে তাদের অজস্র স্মৃতি রয়েছে বলে কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া সাবিহা।
সাবিহা বলে, ‘গত সাত মাস আব্বুর কোনো খোঁজ পাইনি। তিনি কেমন আছেন, কিভাবে আছেন কিছুই জানতে পারিনি। বুধবার তাকে থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আল্লাহর শুকরিয়া। আমার আব্বু নির্দোষ। তার নিশর্ত মুক্তি চাই।’
শিশুপুত্র হাসিন তাজমিন বলে, ‘ওরা কেন আমার আব্বুকে নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল। কেন আব্বুকে সাত মাস পর দেখলাম। তবুও তিনি জেলে। আমাকে আদরও করতে পারলেন না। আমার বাবাকে মুক্তি দেয়া হোক। তার তো কোনো দোষ নেই।’
এদিকে, মারজানের এই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মিঠাপুকুর থানা, রংপুর ডিবি, র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পক্ষই দায় নেয়নি।। তারা এ বিষয়টি অবহিতও নয়। এ কারণে তারা কোনো বক্তব্য দিতেও রাজি হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে উপজেলা পরিষদের কাজে ঢাকায় গেলে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মারজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে ছয় মাস ২৬ দিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
গত ১৪ জানুয়ারি রাতে মিঠাপুকুরের বাতাসন এলাকায় বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থলে চার জন এবং পরবর্তীতে আরও চার জন মারা যান। পরের দিনই মারজানের বাড়িতে যৌথবাহনী অভিযান চালায়।

নিউজবাংলা/একে