নিউজবাংলা – ২৩ সেপ্টেম্বর, বুধুবার:
ঢাকা: রাষ্ট্রের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমস্যার সুরাহা চেয়ে সংসদের পিটিশন কমিটিতে অভিযোগ দাখিলের সুযোগ রয়েছে যেকোনো নাগরিকের।

অভিযোগ পাওয়ার পর তা যাচাই করে স্পিকারের অনুমতিক্রমে সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরপর সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু কমিটির কাছে অভিযোগ জমা পড়ছে না খুব একটা। চলমান ১০ম জাতীয় সংসদে মাত্র দুইটি আবেদন জমা পড়েছে। যা ৫ম সংসদে ছিল ৯৪টি।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের প্রতিটি কমিটির মাসে অন্তত একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়মিত হচ্ছে না। ফলে কমিটির কাছে আসা অভিযোগগুলো যাচাই ও সিদ্ধান্ত হয় না। এতে সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণেই পিটিশন কমিটির কাছে অভিযোগ জমা পড়ছে না।
পিটিশন কমিটির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রবীণ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, ‘পিটিশন কমিটি সংসদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। অথচ দুঃখের বিষয় এটি ফাংশন করে না। আর যেহেতু জাতীয় সংসদের স্পিকার এটির সভাপতি, আমি মনে করি এই কমিটির কার্যক্রম আরো বাড়ানো দরকার। যাতে পিটিশন কমিটির মাধ্যমে জনগণের অভিযোগ সংসদে আলোচনা হতে পারে। তাই এটিকে ফাংশন করানো উচিত এবং জনগণও এর সুফল ভোগ করতে পারবে বলে আমি মনে করি।’
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম ও তৃতীয় সংসদের পিটিশন কমিটির কোনো তথ্য না পায়নি সংসদ সচিবালয় আর ৬ষ্ঠ সংসদের কার্যক্রম মাত্র সাতদিনের জন্য পরিচালিত হওয়ায় এ তিনটি কমিটির সভাপতি ও কার্যক্রম ছিল না। তবে বাকি সংসদগুলোর পিটিশন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।
এ বিষয়ে বর্তমান পিটিশন কমিটির সভাপতি ও সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বৈঠক কম হয় এটা ঠিক। আর যা কিছু নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় তা কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করে করা হয়। কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে পিটিশন কমিটিতে কোন কোন ধরনের আবেদন গ্রহণ করা হবে ও কোনটা করা হবে না। সেটা প্রেক্ষিতে বিচার-বিবেচনা করেই গ্রহণ করা হয়।’
প্রথম থেকে ১০ম জাতীয় সংসদের পিটিশন কমিটির তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল গঠিত প্রথম সংসদের ২ বছর ৬ মাসে পিটিশন কমিটি গঠন ও আবেদন সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই সংসদ সচিবালয়ের কাছে। তবে ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল গঠিত দ্বিতীয় সংসদের ২ বছর ১১ মাস মেয়াদী এই সংসদে পিটিশন কমিটি গঠন করা হয়। তবে এসময় কোনো আবেদন জমা পড়েনি। ফলে কোনো বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই গঠিত তৃতীয় সংসদের ১ বছর ৫ মাস মেয়াদের সংসদে পিটিশন কমিটি গঠিত হয়নি। ফলে কার্যক্রমও ছিল না। ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল গঠিত ২ বছর ৭ মাস মেয়াদী চতুর্থ সংসদের পিটিশন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে এতে কোনো আবেদন জমা পড়েনি। ফলে কোনো বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গঠিত ৪ বছর ৮ মাস মেয়াদী পঞ্চম জাতীয় সংসদে পিটিশন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আর এতেই সর্বপ্রথম পিটিশন জমা পড়ে। এসময় মোট ৯৪টি আবেদন জমা পড়ে। ফলে তৎকালীন সময়ে এই কমিটির ২৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ও বাকিগুলো নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এরমধ্যে কমিটিত থেকে ২টি রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল।
এরপর ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ গঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের ১২ দিন মেয়াদের সংসদে কোনো পিটিশন কমিটি গঠিত হয়নি। ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই ৭ম জাতীয় সংসদ গঠিত হলে পিটিশন কমিটি আবারো গঠিত হয়। এই সংসদের পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদে ১১৪টি পিটিশন আবেদন জমা পড়েছিল। এই কমিটির ১০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বাকিগুলো নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এ কমিটি একটি রিপোর্ট প্রদান করে।
এছাড়া ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর গঠিত ৮ম জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদে গঠিত পিটিশন কমিটিতে ২১টি আবেদন জমা পড়েছিল। এই কমিটির ২টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বাকিগুলো নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এই কমিটি একটি রিপোর্ট প্রদান করে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি গঠিত ৯ম জাতীয় সংসদের পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদের পিটিশন কমিটিতে ১২টি আবেদন জমা পড়ে। তবে কমিটির কোনো বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল পিটিশনগুলো। এরপর ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি গঠিত চলমান দশম জাতীয় সংসদের দেড় বছর মেয়াদের সংসদে পিটিশ কমিটিতে ২টি আবেদন জমা পড়েছে। এই কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আবেদন ২টি নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
পিটিশন কমিটি সম্পর্কে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, জনগণের সাথে সংসদের মেলবন্ধনের জন্য পিটিশন কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগের সংসদগুলোতে পিটিশন কমিটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, আগের সংসদগুলোতে তেমন না হলেও আমরা আসার পর এই কমিটিকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আগামীতেও করা হবে।
এছাড়া সংসদ সদস্যরা পিটিশন কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কেও অবগত আছেন বলেও জানিয়েছেন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। বর্তমান ১০ সদস্যবিশিষ্ট পিটিশন কমিটির সভাপতি স্পিকার ড শিরিন শারমিন চৌধুরী। আর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ডেপুটি স্পিকার মো ফজলে রাব্বি মিয়া, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. আব্দুস শহীদ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ মো. নুরুল হক, ড মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মইন উদ্দীন খান বাদল।

নিউজবাংলা/একে