নিউজবাংলা – ২৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার:
ঢাকা: এবার কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় রাজনৈতিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে এ সিন্ডিকেট সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় চামড়া বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, চামড়া বেচাকেনায় রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাও কাজ করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতারাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে চামড়া বেচাকেনার সিন্ডিকেট এ কাজ করছে।
চামড়া বেচাকেনা সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, এবার চামড়ার দাম আগের বছরের চেয়ে কম। তাই তারা লাখ লাখ টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন। আগের বছরও চামড়া কিনে ভালো লাভ হয়েছে। সেই থেকে উৎসাহ পেয়েই এবার চামড়া কিনছেন। চামড়া সংগ্রহ করার জন্য কিছু নিজ দলের কর্মীদের কাজে লাগিয়েছেন তারা। এসব কর্মীরাও লাভের ভাগ পাবেন বলে জানান তারা।
সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা চামড়া কিনছেন। আর তাদের অর্থের যোগান দিয়েছেন দলীয় থানা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা। এসব কর্মীরা পড়ায় ও মহল্লায় যারা কোরবানি দিবেন তাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছেন চামড়া যাতে অন্য কোথাও বিক্রি করা না হয়। চামড়ার যা মূল্য তা এসব দলীয় কর্মীরা তদের দিয়ে চামড়া নিয়ে আসবেন। ঠিক তাই করেছেন দলীয় কর্মীরা। শুক্রবার কোরবানির পর মুহুর্তে মহল্লায় নেমে পড়ছেন তারা এবং দাম কষাকষি করে তাদেরকে চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। আর তাদের জন্য অন্য কোনো ব্যবসায়ী পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া কেনার সাহস করতে পারছে না।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা যুবলীগের একজন সক্রিয়কর্মী বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন ধরেই কোরবানির পশুর চামড়া পাওয়ার জন্য প্রতিটি মহল্লায় লোকজন ঠিক করে রেখেছি। প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি থেকে চার থেকে পাঁচ জনকর্মীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যাতে তাদের আশে পাশে যারা কোরবানি দিয়েছে তাদের নিকট থেকে চামড়া কিনে নেয়।’ এসব চামড়া সংগ্রহ করে পাইকারী ব্যবসায়িদের নিকট বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, শুধু যুবলীগের নেতারা নয়, এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে মহানগর পর্যায়ের সেচ্চাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতারা।
এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নূরু মিয়া জানান, যুবলীগের কর্মীরা মেৌসুমী চামড়ার ব্যবসা করছে তাতো দোষের কিছু না। তারা তো আর চাদাবাজি করেনি।
দনিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ওসমান গনি জানান, আমাদের মহল্লায় আমরা প্রতি কোরবানির সময় পশুর চামড়া কিনে থাকি। এগুলো কেনা বেচা করে কর্মীরা কিছুটা লাভবান হয়। ব্যবসা করাতো আর খারাপ কিছু না। শুধু আমরা নয়, এ ব্যবসা এক সময় আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুম্মন ভাই করতো। তিনি এখন সরাসরি এ ব্যবসা না করলেও তার কর্মীদের দিয়ে করাচ্ছেন। অথচ তিনি তো বিএনপির নেতা।
এদিকে ঢাকার আশে পাশের জেলা নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায় মেৌসুমী ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ দলীয় নেতা কর্মী। তাদের কারণে অন্যান্য মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আশানুরুপ চামড়া কিনতে পারেনি।

নারায়ণগঞ্জের চামড়া ব্যবসায়ী সিদ্দিরগঞ্জ এলাকার আব্দুল আজিজ জানান, সকাল থেকে চামড়া কেনার জন্য সিদ্দিরগঞ্জসহ কয়েকটি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতারা চামড়া বুকিং দিয়ে গেছে। ফলে তারা যেসব চামড়া বুকিং দিয়েছে সেগুলোতে আর কথা বলা যায়নি। এসব নেতাকর্মীরা বড় ধরনের গরুর চামড়া বুকিং দিয়েছে। দুপুরের পর থেকে কিছু ছোট ও মাঝারী মাপের চামড়া কিনেছি। যেখানে ২০০ চামড়া কিনতাম সেখানে কিনেছি মাত্র ৯০টি।
এদিকে নরসিংদী শহরের চামড়া ব্যবসায় হাজী বাছেদ আহমেদ জানান, শহরের বেশির ভাগ এলাকায় চামড়ার নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আমাদের নিকট বিক্রি করছে। অধিকাংশ চামড়া আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় করতে পারিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, চামড়া ব্যবসার সিন্ডিকেট এক সময় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতা লেদার লিটন ছাড়াও কয়েকটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন পড়া মহল্লায়ও এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা।ফলে ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ) এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘দেশের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা শতকরা ৮০ ভাগ চামড়া কিনে। এবার আমাদের দাবি ছিল যাতে প্রকৃত ব্যবসায়িরা চামড়া ক্রয় করতে পারে। যদি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নামে দলীয় নেতাকর্মীরা চামড়া কিনে তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একই সঙ্গে চামড়া পাচারের আশঙ্কা বাড়বে।

নিউজবাংলা/একে