নিউজবাংলা – ২৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার:
ঢাকা: প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীর মুক্তিযুদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর জেলায় শোক না কাটলেও শুন্য আসনে কে প্রার্থী হবেন এমন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

খোদ মন্ত্রীর পরিবার ও কর্মী সমর্থকদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রীর সহধর্মীনি সৈয়দা সায়রা মহসিনকে সংসদ সদস্য হিসেবে দাবী জানিয়ে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
মর্যাদাপুর্ণ মৌলভীবাজার-৩ আসনে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান এর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতায় জয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী আওয়ামীলীগ শাসনামলে জেলায় প্রথম পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পান। রোগে ভারাক্রান্ত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালণ কালে দেশে বিদেশে চিকিৎসা জনিত কারনেই বেশী সময় দিতে হয়েছে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী জনপ্রিয় নেতা সৈয়দ মহসিন আলী সিঙ্গাপুরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে সমাহিত করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুতে তৃণমূলে এখনো তার ভক্ত, সহকর্মীদের মাঝে শোকের আবহ বিরাজমান হলেও পরিবার ও কর্মীদের পক্ষ থেকে উপ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষনা করে প্রচারের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে শুন্য আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামীলীগের অনেকেই জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে চলছে জোর আলোচনা। উপনির্বাচন কেন্দ্রিক মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রার্থী যাচাই বাচাই নিয়ে চলছে নানা পর্যালোচনা। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্বপ্ন পুরণ ও জনকল্যাণে মানুষের পাশে দাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁর ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমিন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় নতুন জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করেছে।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের উপনির্বাচনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন হাফ ডজনের বেশী নেতা। কর্মী সাধারণের আলোচনায় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় বিশেষভাবে প্রচারিত হচ্ছে প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মীনি সৈয়দা সায়রা মহসিন ও তার মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিনের নাম। এব্যাপারে মন্ত্রীর মেঝো মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিন মোবাইল ফোনে আলাপ চারিতায় জানান আমরা এখনো বাবার স্মৃতি ভুলতে পারছিনা। প্রতিক্ষনে বাবার ভালবাসার নির্দশনগুলো মনে ভেসে উঠছে। আমার বাবা মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন এবং মা কাছে থেকে সবই দেখেছেন। জনগণ যদি বাবার মতো মাকেও ভালোবাসেন আমি স্বাগত জানাই। তবে রাজনীতিতে অনেক আলোচনা হয়। আমার এখনো অনেক সময় হাতে আছে। বাবার স্মৃতি সামলিয়ে উঠে অবশ্যই জনগণের পাশে থাকবো। নির্বাচন নিয়ে আমি এখনো প্রস্তুত নই।
এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করীম, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, যুক্তরাজ্য আ’লীগ সহ সভাপতি এম এ রহিম শহীদ (সিআইপি), জেলা যুবলীগ সভাপতি ফজলুর রহমান, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান মো: সুহেল আহমদ, তবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান অথবা সাবেক রাষ্ট্রদূত মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান গিয়াস উদ্দিন মনির ও জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুর রহমানকে পূর্ণ মন্ত্রী করতে প্রার্থী হিসেবে দল মনোনীত করতে পারে এমন আলোচনাও চলছে।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বিজয়ী হয়ে আ’লীগের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এর আগে এ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারনে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিনকে মনোনীত করলে তৃণমূলের কর্মীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে জানালেন জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল। জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ কামাল হোসেন বলেন আমি মানুষের কল্যানে রাজনীতি করি। তৃণমূল ও দল যাকে মনোনীত করবে তিনি দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন। আমি আশাবাদী তৃণমূল ও আমার দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আমাকে দেশ গড়ার আন্দোলণে শরীক করবেন।
উল্লেখ্য ৯৮ সালের জেলা আ’লীগের কাউন্সিল ও সম্মেলনের পর থেকে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী চলছে। একদিকে সাবেক চীপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ গ্রুপ, অন্যদিকে (প্রয়াত) সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সমর্থিত গ্রুপ এখনো পৃথক কর্মসূচী পালণ করে যাচ্ছে। শুরুতে সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান ও জেলা আ’লীগ সভাপতি সৈয়দ মহসিন আলী (সদ্য প্রয়াত) দুইভাগে বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালণ করেন। পরবর্তীতে আজিজুর রহমান রাজনীতিতে কিছুটা নিস্ক্রিয় হয়ে গেলে এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করেন সাবেক চিফ হুইপ, বর্তমান জেলা সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ও সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ।

নিউজবাংলা/একে