নিউজবাংলা: ২৯আগষ্ট, শনিবার:
ঢাকা: বর্তমান সময়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন শুধুমাত্র কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০১৫’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজী হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির অগ্রগামিতার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিবেচনায় দেখা যায় যে, স্বল্পোন্নত বা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কৌশলগত বা সিস্টেমগত দুর্বলতা এবং উদার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে প্রাপ্ত অর্থ লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে অতি সহজেই বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে দেশে বিনিয়োগের সুযোগযোগ্য বিভিন্ন সংবেদনশীল সেক্টরগুলোতে ঢুকে পড়ে। আবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে অতি সহজেই এ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়।’
এসব অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোনোরূপ ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে না বলেই মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করা একান্ত প্রয়োজন বলে জানান ডেপুটি গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএফআইইউ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্যাদি প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করাও বিএফআইইউয়ের অন্যতম দায়িত্ব।’
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আইন প্রণয়ন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নই শেষ কথা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। আইন প্রয়োগে বা বাস্তবায়নে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড প্রণয়ণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের প্রণীত ৪০টি (চল্লিশ) নির্দেশনার আলোকে দেশগুলোকে নিজ নিজ অঞ্চলে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।’
ম্যানুপুলেটরেরা ও কিছু কিছু কোম্পানির অসৎ মালিক অথবা কর্মকর্তারা কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্য কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণের অবৈধ অর্থের মালিক হয়ে যায় উল্লেখ করে রাজী হাসান বলেন, ‘এ অর্থ রাষ্ট্র, সমাজ তথা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। গ্রাহকের পেশার বিবরণ বিস্তারিতভাবে গ্রহণ না করা ও অর্থের উৎস নিশ্চিত না হয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ায় মানি লন্ডারিং হতে পারে যা এ মার্কেটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিএফআইইউয়ের অপারেশনাল হেড মো. নাসিরুজ্জামান।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিএফআইইউর সহকারী প্রধান ম. মাহফুজুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এক্সচেঞ্জ কমিশনার মো. আমজাদ হোসেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির প্রিন্সিপাল কেএম জামশেদুজ্জামান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা।
সম্মেলনে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০জন কর্মকর্তা অংশ নেন।

নিউজবাংলা/একে