নিউজবাংলা: ০৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার:

শাবিব হোসেন, রাজশাহী প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গত বছর গুলি চালিয়ে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করার পর এবার বছরই আবার সান্ধ্যকোর্স চালু করা হচ্ছে প্রকৌশল অনুষদে।

গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ২৩৮তম সভায় ওই অনুষদের মোট ৫টি বিভাগে এ কোর্স চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার হয়। এর আগে ২০০৮ সালে ব্যবসায় অনুষদ, ২০১০ সালে আইন অনুষদ এবং ২০১৪ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকল বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ২৩৮ তম সভায় প্রকৌশল অনুষদে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখনও এ অনুষদের কোনো বিভাগের সান্ধ্যকোর্স চালু হয়নি। বিভাগের সভাপতিরা চাইলে যে কোনো সময় তা চালু করতে পারবেন। প্রকৌশল অনুষদ সূত্রে জানা গেছে, এ অনুষদে মোট বিভাগ রয়েছে পাঁচটি। বিভাগগুলো হলো, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাটেরিয়ালস্ সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে চুড়ান্তভাবে পাশ হওয়ার পর এসব বিভাগে যেকোনো সময় চালু করা হবে সান্ধ্যকোর্স। অনুষদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে বিভাগের সভাপতিরা তা চালু করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সান্ধ্যকোর্স চালুর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাইভেটাইজেশন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি তুলে সকল বিভাগে সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের। কিন্তু তারপরও গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকল বিভাগের সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়ে প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আন্দোলনে নামে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সান্ধ্যকোর্স বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। তাদের গুলি ও রাবার বুলেটে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় একাধিক শিক্ষার্থীকে আসামী করে মামলাও করা হয়। যে মামলা এখনও তোলা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আবারও প্রশাসনের নতুন করে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়াতুল্লাহ খোমেনী বলেন, নতুন করে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়ে শুনলে স্তম্ভিত হতে হয়। প্রশাসন সান্ধ্যকোর্স বন্ধ না করে একের পর এক অনুষদে তা চালুর মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের যে দর্শন তা সান্ধ্যকোর্সের সাথে যায়না। তাই প্রশাসনের উচিত সান্ধ্যকোর্স বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মূল কাজ হলো গবেষণা ও পাঠদান করা। এসব করার পর অন্য কোথাও সময় দেওয়া কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে গবেষণা ও বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যদের শিক্ষা দিচ্ছেন। এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন বলেও মনে করেন তিনি।

নিউজবাংলা/একে