চাঁই তৈরীতে স্বচ্ছলতার হাসি
নিউজবাং লা: ১৮আগস্ট, মঙ্গলবার:
এম এ আই সজিব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশ নজিপুর গ্রামের সোনা চাঁন দাস। ৪ মেয়েকে নিয়ে বিপাকে।
এমনিতেই চলছিল না সংসার তার উপর মেয়ে ৪টি দিনদিন বড় হচ্ছে। তাদেরকে বিয়ে দিতে হবে এ নিয়ে দুষ-চিন্তার শেষ নেই। ৩ বছর আগের চিত্র এটি। কিন্তু বর্তমানে দুই মেয়েকে ভাল পরিবারে বিয়ে দিয়েছেন, এক মেয়ে পড়ে ৫ম শ্রেণিতে। স্বপ্ন দেখছেন মেয়েকে লেখা পড়া করিয়ে শিক্ষিত করবেন। হঠাৎ করেই তার ভাগ্যের চাকা বদলে দিল মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই তৈরীতে। ৩ বছর আগেও যার সংসার চলত না, আজ তার মূখে স্ব”ছলতার হাসি।
তিনি জানান, যখন আমার সংসার কিছুতেই চলছিল না তখনই আমি, আমার স্ত্রী ও আমার ৪ মেয়েকে নিয়ে চাঁই তৈরী করতে শুরু করি। আর এ থেকেই আজ আমি অনেক সুখি।
তিনি বলেন, আমি মনে করতাম মেয়েরা শুধু মা-বাবার বোঝা, কিন্তু আজ দেখলাম, না মেয়েরাও চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।
শুধু সোনা চাঁন দাস নয় হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের অনেক পরিবারই এখন চাঁই তৈরী করে অনেক সাবলম্বি।
জানা যায়, বর্ষায় দেশীয় মাছ আহরণের গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি হাওর। জেলার হাওর অধ্যুসিত উপজেলা বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, লাখাই এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলা এলাকার মৌসুমে হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ায় মাছ ধরাকেই তারা পেশা হিসেবে নিয়ে থাকেন। আর মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে থাকেন তারা। এর মধ্যে জালের পরপরই বেশ জনপ্রিয় ফাঁদ হল বাঁশের তৈরি চাঁই। ভরা বর্ষায় বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের মাছ শিকারের জন্য এ উপজেলাগুলোতে চাঁইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। আর এ কারণে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করার উপায় হিসেবে চাঁই তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর, নওয়াবাদ, চিলারাই, ইকরাম, কাগাপাশা, নজিপুরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার অনেক পরিবার এখন চাঁই তৈরী করে সফলতার মূখ দেখেছেন। তারা চাঁই তৈরির কাজ করে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, অনেক এলাকায় এখন চাঁই তৈরীর ধুম পড়েছে। বাঁশ, প্লাস্টিকের বস্তা, গুনা ও সুতা দিয়ে চাঁই তৈরির কাজ করে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছন অনেক পরিবার। অনেক যুবক ছেলেরা এখন বেকারত্ব ঘুচাতে যুক্ত হন চাঁই তৈরির কাজে। পরিবারের মহিলারাও পুরুষদের ন্যায় চাঁই তৈরী করছেন। আবার দেখা যায় অনেক ছেলে মেয়েরা আবার স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে এ কাজ করছেন। এখানকার তৈরী করা চাঁয়ের গুণগত মান বেশ ভালো হওয়ায় অন্য এলাকার মাছ শিকারীদের কাছে এখানকার চাইয়ের কদর বেশি।
বানিয়াচং উপজেলার চিলারাই গ্রামের চাঁই কারিগর মধু সরকার জানান, প্রতিদিন তিনি ১০ থেকে ১২টি চাঁঁই তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি বড় চাঁই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং ছোট চাঁই একত্রে ২০টি বিক্রি হয় ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫শত টাকা।
নবীগঞ্জ উপজেলার কড়িয়া গ্রামের চাঁই কারিগর রাজেন্দ্র সরকার জানান, চাঁই তৈরী করা অনেক সহজ কাজ। তাছাড়া এই ব্যবসায় মূলধন খুব বেশি লাগে না। পরিবারের সবাই মিলে এই কাজ করা যায়।
কুমিল্লা থেকে চাঁই কিনতে আসা ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, এখানকার চাঁইয়ের গুণগত মান ভাল হওয়ায় প্রতি বছরই আমি এখান থেকে চাঁই নিতে আসি। তাছাড়া এখানকার চাঁই অনেক কম মূল্যে পাওয়া যায়।
চাঁই তৈরীর সাথে জড়িত অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, চাঁই তৈরির বিভিন্ন উপকরণ যেমন বাঁশ, প্লাস্টিকের বস্তা, গুনা ও সুতার দাম এখন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলোর দাম কমলে আমাদের জন্য আরো অনেক ভাল হত। তাছাড়া এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করলে এ শিল্পে আরো অনেকে এগিয়ে আসত।
এ ব্যপারে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) এর সহকারী ব্যাবস্তাপক মো. মোহসিন কবির খান জানান, এ শিল্প বর্তমানে হবিগঞ্জ এলাকায় একটি যুগান্তকারী সফলতা এনেছে। এ ব্যবসায় জড়িতরা চাইলে সরকার অবশ্ব্যই বিভিন্নভাবে ঋন দিয়ে সহায়তা করবে। এছাড়া এ শিল্পের প্রসারের জন্য আমারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। নতুন যারা এ পেশায় আসতে চান তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্তাও করব আমরা।
নিউজবাংলা/একে