হবিগঞ্জ না রবিগঞ্জ?
নিউজবাং লা: ১৮আগস্ট, মঙ্গলবার:
এম এ আই সজিব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
বে-সরকারি টেলিফোন অপারেটর রবি এখন ঝলসে উঠেছে খুব ভয়ঙ্করভাবে। তার আগুনে পুড়ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। আর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরেছে হবিগঞ্জে।
হবিগঞ্জের প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানেই শোভা পাচ্ছে রবির সাইনবোর্ড। মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু করে থানা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, রেস্ট হাউজ, আধুনিক জেলা হাসপাতাল, অফিসার্স ক্লাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক লাইব্রেরি, দায়রা বিচারিক আদালত, জেলা প্রশাসন অডিটরিয়াম। এমনকি এ নিয়ে যারা লিখতে পারেন তাদের সেই সংগঠন প্রেসক্লাবের ৩টি সাইন বোর্ডেও ‘রবি’র নাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন- সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কাজের জন্য টেন্টার ঘোষনা দেওয়ার কথা। কিন্তু সারা জেলার সব কয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান কি করে টেন্টার ছাড়া রবির সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখল। স্থানীয়রা প্রশ্ন করছেন এসব প্রতিষ্ঠান কি ‘রবি’র কাছে বন্ধকি? এক ব্যক্তি আবার তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আমাদের হবিগঞ্জ কি রবিগঞ্জে পরিণত হয়ে গেছে ? তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে জেলা জুড়ে এখন শুধু এই আলোচনা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন- একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান কি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে।
ঐ ব্যক্তির ফেসবুকের স্ট্যাটার্সটির কিছু অংশ পাঠকের জন্য তোলে ধরা হলো
তিনি লিখেছেন-বিদেশি একটি টেলিফোন কোম্পানি কী করে আমাদের জাতীয় স্বার্থের সরকারি প্রতিষ্ঠানে কী প্রলোভনের বিনিময়ে এমন আগ্রাসী ভূমিকায় থাকতে পারে? এ বিষয়ে সবার কুলুপ আঁটা। টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা হাঁ করে চেয়ে থাকে তাদের বিজ্ঞাপনের করুণা ভিক্ষা করতে। মিডিয়াকে কাবু রাখতে দেদার ঢালেও তারা। তাই মিডিয়াগুলোও এ নিয়ে কোন লেখা লেখি করছে না। শুনলাম সম্প্রতি একটা ইংরেজি দৈনিককে নাকি মাত্র ৮ কোটি টাকা দিয়েছে ‘শিক্ষামূলক’ কোনো একটা প্রজেক্ট স্পন্সর করতে। সুতরাং তারা এর ব্যাপারে চোখ বুজে থাকবে। এমন উদাহরণ খুঁজলে হয়তো আরো পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার ভাবনা অন্য জায়গায়। উপজেলা থেকে জেলায় এসেছে, তারপর যাবে বিভাগে, শেষে রাজধানীতে। এক সময় হয়তো দেখবো ‘বাংলাদেশ সচিবালয়’ কিংবা ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানেও হয়তো লেখা হয়ে যাবেÑ লাল-সাদার সাইনবোর্ডে ঐ ‘রবি’র নাম। আমরা গরিব, এটা মানি। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের জন্য তৈরি হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বানানোর অর্থ যে আমাদের নাই, এটা আমি মানতে রাজি নই। যেহেতু বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের মালিকরা বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ে প্রকাশ করতে চাইবেন না বলে ফেসবুকে আমার প্রতিক্রিয়াটি জানিয়ে রাখলাম।
তার এই ফেসবুক স্ট্যটার্স এর সূত্র ধরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় আছেন বলে জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।
হবিগঞ্জ সরদ মডেল থানায় লাগানে সাইনবোর্টটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- বেসরকারি কোন কোম্পানির সাইবোর্ড সরকারি প্রতিষ্ঠানে লাগানোর জন্য কোন আইন নেই। আবার লাগানো যাবে না এমনও কোন আইন নেই। তাই আমরা লাগিয়েছি।
উপজেলা পরিষদের সাইনবোর্ডটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদুল হক বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাকুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বেসরকারি কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন সংবলিত সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে লাগানোর কোনো আইন নেই। আবার নিষেধও নেই। আবেগের বশবর্তী হয়ে যদি কেউ স্পন্সর করতে চায় তাতে অসুবিধা নেই। বরং এখানে সরকারি কোন অর্থ ব্যয় না হওয়ায় এটি ভালই হয়েছে।
নিউজবাংলা/একে
Categories: বিশেষ,সারাদেশ