নিউজবাং লা: ২১আগস্ট, শুক্রবার:

 

এম এ আই সজিব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:

অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে হবিগঞ্জের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ। ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি ভবন, যা একটুু পরিচর্যা পেলে টিকে যেতে পারে, হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ ও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

শীঘ্রই এর স্থাপনাগুলো রক্ষায় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।

হবিগঞ্জ শহর থেকে দক্ষিণদিকে তিন কিলোমিটারখানেক এগোলে পাওয়া যায় বড় বহুলা গ্রাম। এ গ্রামের ভিতরে এক সময় বাস করতেন পোদ্দার পরিবার। ওই পরিবারের নামে বহুলা গ্রামের প্রবেশপথ এলাকাটির নাম হয়েছে ‘পোদ্দার বাড়ি’। রিকশায় বা পায়ে হেঁটে বড় বহুলা গ্রামের আধ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করলে পাওয়া যায় পোদ্দার পরিবারের বসত-ভিটা। চারিদিকে তাকালে দেখা যাবে লাল ইটের নির্মিত কয়েকটি পুরনো ভবন কালের প্রবল ছোবল উপেক্ষা করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পোদ্দার পরিবারের উত্তরসুরিরা শহরে বসবাস করায় পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকগুলো পরিবার। ভবনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ভারতবর্ষের মোঘল আমলের শেষ দিকে যে ধরনের স্থাপনারীতি এদেশে প্রচলিত ছিল এ ভবনগুলোর স্থাপনারীতিও প্রায় সে রকমই।

পোদ্দার পরিবারের উত্তরসূরী স্বর্গীয় দিলীপ কুমার রায় এর পরিবার ও এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুণক চন্দ্র পোদ্দার ও দাশুরাম পোদ্দার ছিলেন দুই ভাই। তারা এলাকায় জমিদার বলে পরিচিত থাকলেও তাদের হরেক রকমের ব্যবসা ছিল। ঢাকা সিলেট কলকাতা ও অন্যান্য শহরে ব্যবসা করতেন। সে আমলে সম্পন্ন বড় ব্যবসায়ীদের সমাজে চালু নাম ছিল পোদ্দার।

উল্লিখিত দুই ভাই এক সময় ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন। দুই ভাইয়ের জন্মসাল সম্পর্কে না জানা গেলেও বড় ভাই গুণক চন্দ্র পোদ্দারের মৃতু্যুসাল জানা যায় ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ। সে হিসেবে অনুমান করা যায় গুণক চন্দ্র পোদ্দারের জন্ম অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে হতে পারে। তাহলে বাড়ী নির্মাণটি হয়ে থাকতে পারে ১৮৫০/৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। সে সময়ে দেশে বৃৃটিশ স্থাপত্যরীতির প্রচলন ঘটে গেলেও তারা নিশ্চয় ঐতিহ্যবাহী মোঘল স্থাপত্যরীতির অনুরাগী ছিলেন। সেটি ভবনগুলোর নকশার দিকে তাকালেই বুঝা যায়। সময়ের আঁচড়ে দুয়েকটি ভবনের অংশবিশেষ ধসে গেলেও একটি ভবন প্রায় পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি নন্দন এ ভবনটিও পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। গুনক চন্দ্র পোদ্দারের পুত্র গোপাল চন্দ্র পোদ্দার ও দাশুরাম পোদ্দারের পুত্র বাঁশীণাথ পোদ্দার ও তার ভাইয়েরা পিতার পরবর্তীতে জমিদারি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশুনা করেন। সে সময় তারাও পুরাতন বাড়ীর সামনে আরও বাড়ী নির্মাণ করেন। কিছুটা পরবর্তীকালে নির্মিত হলেও নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে বাড়ি ছিল যথেষ্ট সৌন্দর্যমন্ডিত। পরবর্তীতে বাঁশীনাথ পোদ্দারের ছেলে বিশ্বাম্ভর পোদ্দার ও তার ভাইয়েরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও আইনপেশায় উত্তরোত্তর প্রসার লাভ করার উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জ শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায় বাসা নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। শহরে থাকলেও গ্রামের সাথে ছিল তাদের নিবিড় যোগাযোগ। আবহাওয়া ও ভিত্তিভূমির আর্দ্রতার কারণে তাদের গ্রামের ভবনটির ইটগুলো এখন খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন চললে ভবনটি ধসে পড়তে বাধ্য। তাই প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বড় বহুলা গ্রাম ও হবিগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যানুরাগী মহল। এতে যেমনভাবে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা রক্ষা পেতে পারে, তেমনি এটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষদের প্রিয় স্থান অথবা একটি শুটিং স্পট।

 

নিউজবাংলা/একে