টাঙ্গাইলের বর্গাচাষিরা জমি ফিরিয়ে দিচ্ছেন ॥ ধানের দাম নিয়ে হতাশ কৃষকরা
নিউজবাংলা: ২৯আগষ্ট, শনিবার:
আব্দুল্লাহ আল নোমান:
টাঙ্গাইলে বাজারে দাম কম থাকায় ধান আবাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বর্গাচাষিরা জমি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। উৎপাদিত ধানের অর্ধেক জমির মালিককে দেয়ার পর তারা যে ধান পান তাতে তাদের উৎপাদন খরচই ওঠছে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে বর্গাচাষিরা জমি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এতে বেকায়দায় পড়েছেন জমির মালিকেরা।
তারা লোকসান মেনে নিয়ে এখন নিজেদের জমি নিজেরাই আবাদ করছেন। জানাগেছে, টাঙ্গাইলে আমন ধান চাষের পুরো মওসুম চলছে। ধানের আবাদ নিয়ে কৃষকরা সবাই হতাশা ব্যক্ত করেন। কৃষক মোজাফফর আলী জানান, এ বছর নিজের ৬০ শতাংশ ছাড়াও ৮০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধানের আবাদ করছেন। গত মওসুমে তার বর্গা জমি ছিল ১২০ শতাংশ। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় তিনি এবার জমির মালিককে ৪০ শতাংশ জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, গত বছর ধানের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আস্তে আস্তে জমির মালিককে জমি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত বছর ১২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন কৃষক শামসুল ইসলাম। কিন্তু ধান আবাদ করে লোকসান হওয়ায় তিনিও জমির মালিককে ৪০ শতাংশ জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন। ৫০ শতাংশ পরিমাণ একটি জমিতে ১০-১২ জনকে সাথে নিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন শামসুল ইসলাম। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, এই জমিতে ধান আবাদে সব মিলিয়ে খরচ হবে অন্তত ১০ হাজার টাকা। ধান হবে সর্বোচ্চ ২২ মণ। বর্গাদারের অর্ধেক ভাগ বাদে তিনি ধান পাবেন ১১ মণ। বাজারে বর্তমানে ধানের দাম ৬৫০ টাকা। সে হিসেবে ১১ মণ ধানের দাম আসে সাত হাজার ১৫০ টাকা। অর্থাৎ লোকসান দুই হাজার ৮৫০ টাকা। তিনি জানান, সারা বছরই চাল কিনে খেতে হয়। তাই ক্ষতি গেলেও কষ্ট করে ধানের আবাদ করেন। তাতে অন্তত কিনে খাওয়ার ঝামেলাটা থাকে না। ধানের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা মণ হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
কালিহাতী উপজেলার পালিমা গ্রামের একজন বড় কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি এবার নিজের ১৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করছেন। আক্ষেপ করে তিনি জানান, ধান আবাদ করে লাভ হয় না। তাই আবাদের ঝামেলাও মাথায় নিতে ইচ্ছে করে না। এ জন্য তার বেশির ভাগ জমিই বর্গা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় বর্গাচাষিরা তিন বিঘা জমি তাকে ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে খুব বেকায়দায় আছেন। কী আর করার। বাধ্য হয়ে লোকসান মেনেই ধানের আবাদ করছেন। কারণ, জমিতো আর পতিত রাখা যায় না।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানাগেছে, এ বছর (২০১৫-১৬ মওসুম) পুরো জেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৪৩ হেক্টর, উফশী ৪৪ হাজার ৯৪৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে তিন হাজার ৭৬৭ হেক্টর জমিতে। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে অন্তত ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার জেলায় বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার হাজার ৭৫০ হেক্টরে। শেষ পর্যন্ত বীজতলা তৈরির পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯০৫ হেক্টরে।
গত বছর (২০১৪-১৫ মওসুম) টাঙ্গাইলে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৯৬৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সব মিলিয়ে আবাদ করা হয় ৯০ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ২৬৩ হেক্টর কম।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল হাশিম জানান, গত বছর বন্যার কারণে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও আশা করছি এবার হবে। তিনি বলেন, বাজারে ধানের দাম কম। এটা অবশ্যই কৃষকদের জন্য হতাশার কারণ। তবে আগামীতে ধানের দাম বাড়তে পারে।
নিউজবাংলা/একে