আশিকী: স্বাদে গন্ধে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ভারতীয় ছবি
নিউজবাংলা – ২৮ সেপ্টেম্বর, সোমবার:
ঢাকা: ঢাকা: হিন্দি ‘ইশক’ ছবির নকল ‘আশিকী’, এটি জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনার ছবি, ছবিটি পুরোটাই স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে শ্যুট করা, ছবিতে বলিউড মার্কা বাংলাদেশি নায়িকা নুসরাত ফারিয়া প্রথমবার পা রেখেছে, বাংলাদেশে নির্মাতা হিসেবে আব্দুল আজিজের কথা বলা হলেও কলকাতায় শুধু অশোক পতির কথায় বলা হচ্ছে; এইরকম আরো অসংখ্য জানা তথ্য মাথায় নিয়েই দেখে ফেললাম এবার ঈদের বহুল আলোচিত ছবি ‘আশিকী’।
ঝকঝকে প্রিন্ট আর বৈদেশিক তকতকে দৃশ্যের গাঁথুনিতে ছবিটি কখনোই বাংলাদেশি জেনরের কোনো সিনেমার মত মন হয়নি, একবারের জন্যও না! সত্যিকার অর্থেই এটি যে বাংলাদেশি সিনেমা না, কিংবা যৌথ প্রযোজনার ছবিও না তার প্রমান পাওয়া যাবে মনযোগ দিয়ে ছবিটি দেখলেই!
অর্ধেক ছবি মানে বিরতির পূর্ব পর্যন্ত শুধু কথার রসদ দিয়ে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে, কোনো কাহিনী নেই, কাহিনীর ভবিষ্যৎ নেই, সংঘাত নেই। বিরতির পর দর্শক ছবির একটা ভবিষ্যতের খোঁজ পায় বটে, কিন্তু এটা গুরতর কোনো বিষয় না; সিনেমা বলতে যে বিশালতা বুঝি সেই ক্যানভাসটা ছবিতে ছিলো না । একটা কাকতালকে কেন্দ্র করে ছবিটি আবর্তিত। বাস্তব জীবনে কাকতালীয় প্রচুর ঘটনা ঘটে, সিনেমায় আরো বেশী ঘটে আর ‘আশিকী’তে তো রীতিমত কাকতালের ছড়াছড়ি। কাকতাল প্যারাডক্সে জর্জরিত দুইবাংলার যৌথ প্রয়াস ‘আশিকী’! ছবির কাহিনীতে দেখা গেল, শ্রুতির ভাই অজয় এবং রাহুলের বোনের মধ্যে তিন বছর আগে একটা সম্পর্ক ছিল। রাহুলের বোন যদিও অজয়কে কখনোই ভালোবাসেনি, কিন্তু অজয় রাহুলের বোনকে পেতে চাইতো। তার অন্যকোথাও বিয়ে হোক এটা কখনোই মেনে নিত না। একসময় বিষয়টি টের পেয়ে রাহুল অজয়কে ধোলাই দিয়ে বড় বোনকে অজয়ের কাছ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এর তিন বছর পর ইংল্যান্ডে রাহুল যে মেয়েটির প্রেমে পড়ে, কাকতালীয়ভাবে সেই মেয়েটিও অজয়ের বোন! এটা হল মোটাদাগে কাকতাল ব্যাপার, এছাড়াও ছবির ভেতরে অসংখ্য ছোট বড় কাকতালের ছড়াছড়ি।
কাকতালের আরেকটা ছোট নমুনা দেয়া যেতে পারে, ছবির প্রথমে পায়ের গোড়ালিতে ‘ডলার সাইন’ ট্যাটু আঁকা এক রূপসীর প্রেমে পড়ে রাহুল। সে কিন্তু ওই রূপসীর মুখ দেখেনি, ফলে সে অচেনা! কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তার ইউনিভার্সিটিতে জিওগ্রাফি পড়ুয়া যে তরুণীটির মুখশ্রী দেখে প্রেমে পড়ে রাহুল সে ওই ডলার সাইন ট্যাটুওয়ালা মেয়েটিই। অন্যদিকে শ্রুতির ক্ষেত্রেও এমনটিই হয়। ছোট্ট এক পিচ্চির বাসের উপর থেকে খেলতে যেয়ে টেডিবেয়ার পরে যাওয়ায় রাহুল যখন দৌড়িয়ে তা ফেরত দেয়, তখন তার একটি ‘ক্যাপ’ মাথা থেকে খোলে পড়ে যায়। এই ক্যাপটি খুঁজে পায় শ্রুতি। এবং যথারীতি ক্যাপের ছেলেটির চেহেরা না দেখেই তার প্রেমে পড়ে সে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ক্যাপের ছেলেটিও আসলে একজনই, রাহুল। কাহিনীর পরতে পরতে কাকতাল! শুনেছি ‘আশিকী’ ছবিটির নাম প্রথমে ছিল ‘প্রেমি ও প্রেমি’; কিন্তু মনে হয় সবকিছুর সাথে ‘নামকরণ’ একটা ভাইটাল জিনিষ। এই হিসিবে ছবিটির নাম ‘প্রেমি ও প্রেমি’ কিংবা ‘আশিকী’ না রেখে হতে পারতো ‘কাকতালীয় প্রেম’। তাহলে অন্তত নামকরণের স্বার্থকতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস করতো না।
বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্ভোগকে সমর্থন দেয়ারও অভিপ্রায় ‘আশিকী’, না না জোরপূর্ব নয়, ভালোবেসে! যখন মদ পান করে রাহুল ও শ্রতির মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যায়, এবং যথারীতি শ্রুতি ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য হাহাকার করে উঠে, তখন রাহুলকে দেখি সে বলছে, যদি পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা থাকে তাহলে সেক্স হতেই পারে। এটা নিয়ে অনুশোচনারও কিছু নেই। ভালোবাসা আর শারিরীক সম্পর্কের মধ্যে এমন মনগড়া দর্শন প্রচার ‘আশিকী’-তে দেখলেও চারপাশে দেখি বেশী কথা উঠছে ছবিতে ‘যৌন সুড়সুড়ি’ বিষয়ক! হ্যাঁ, এটা সত্য যে ছবিতে যৌন সুড়সুড়ি ছিল বিস্তর। ইঙ্গিতে, ডাইলগে কিংবা ছবির নায়ক রাহুলের কথা বার্তায়ও; কারণ এ ছবিটার সাথেতো আসলে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই।
নিউজবাংলা/একে