নিউজবাংলা – ২৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার:

 

একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র মার্কেটিং-এ এমবিএ শেষ করা একজন চাকুরিপ্রার্থী এমনটি বলছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল, তাহলে কেন মার্কেটিং-এ এমবিএ করলেন? উত্তরটা তেমন গ্রহনযোগ্য ছিলো না বলে উল্লেখ করলাম না। তবে একটি গল্প (কাল্পনিক এবং সংগৃহীত) দিয়ে শুরু করা যাক-

(মামুন সাহেব। অনেক কষ্টে বাবার ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে আর তার দেখা নেই। স্কুল এবং কলেজে আমরা সবাই তাকে বিভিন্ন নামে ডাকতাম। অনেক সময় বন্ধুরা তার নামের ‘ন’ তুলে দিয়ে ‘মামু’ নামেই ডেকে বেড়াত। এতে তার কোন ক্ষোভ ছিলো না। প্রচন্ড বাচাল স্বভাবে এই ছেলেটির সাথে অনেকদিন ধরে যোগাযোগ না থাকায়, খুব খারাপই লাগছিল।

হঠাৎ উঁচু অঙ্কের বেতন, ঝলমলে স্যুট-টাই পরা, ল্যাপটপ-আইফোন-৬এ ঈড়হহবপঃরারঃু-তে বলীয়ান হয়ে স্মার্ট আর অপ্রতিরোধ্য ‘মামুন সাহেব’ হয়ে উঠলেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, উঠতি চাকুরিপ্রার্থীদের কাছে আইকন । মামুন সাহেবর নতুন নাম হল ‘সেলস এক্সিকিউটিভ’ । সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলেন । পুরনো কোম্পানি ছেড়ে নতুন কোম্পানিতে যোগ দিলেন ঝধষবং গধহধমবৎ হিসেবে । নতুন ফ্ল্যাট হল । বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বা ঞধৎমবঃ পূরণ করতে পারায় কোম্পানি খুশি হয়ে বখশিস দিল আস্ত একটা নতুন চার চাকার গাড়ি । পাড়া-প্রতিবেশীরা তাদের ছেলেমেয়েদের বলতে শুরু করলেন-

‘ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে ক্ষতি নেই, মামুন সাহেবের মত হও ।’ সাফল্যে ঝকমক করে উঠল মামুন সাহেবের আংটি ।

ক্রমে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ল । নতুন নতুন কোম্পানি এল । আরও অনেক অনেক মামুন সাহেবেরা নেমে পড়লেন আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডের একই চৎড়ফঁপঃ বেচতে । কী কী চৎড়ফঁপঃ? স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে বীমা, জীবনদায়ী ওষুধ থেকে মোবাইল সংযোগ, আলপিন টু এলিফ্যান্ট । আরও বেশি বিক্রি করতে হবে, আরও কঠিন ধার্য হল লক্ষ্যমাত্রা । মারাত্মক ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মামুন সাহেব, দেখা হলেই বলেন- ‘মরার সময় কই?!)

আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে কেরিয়ার প্লানিং। বাবা বলেছেন তাই ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হলেও চলবে! অদ্ভুত বিষয়, আমি হতে চাই মিউজিশিয়ান/বিউটিশিয়ান/পলিটিশিয়ান/ফটোগ্রাফার/অভিনেতা/অভিনেত্রী অথবা কোন গঁষঃরহধঃরড়হধষ ঈড়সঢ়ধহু-এর ঐবধফ ড়ভ ঝধষবং! বাবাকে বলার পরে উত্তরটা স্বভাবতই সুখকর হবার কথা নয়। অনেক কষ্টে যখন বাবাকে ‘থ্রি ইডিওটস্’ দেখানোর চেষ্টায় সফল হওয়া গেল এবং মুভির শেষ পর্যায়ে এসে বাবা বললেন এরা আসলেই ‘ইডিওটস্’ তখন ভাষা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। ‘জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে’ এমন ডায়লগ বুদ্ধি হবার পর থেকে শুনেননি এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম আছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কোন পথ- সেই প্রতিষ্ঠিত হবার? তা কি নির্ধারণ করা হয় তার পরিবারের ইচ্ছার উপর? না কি ঐ ব্যক্তির কোন ইচ্ছার প্রাধান্য রয়েছে?

কোন পেশাকেই ছোট করে দেখার জন্য এই লেখা নয় বরং আমাদের আগ্রহটাকে একটু প্রাধান্য দিয়ে এবং সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে সফলতার পথ খুঁজে দেওয়ার অনুরোধের জন্যই আমার এই ছোট্ট প্রয়াস।

যে ছেলেটি অথবা মেয়েটি ‘ব্যবসায় বিষয়ে’ পড়াশুনা করতে চাচ্ছে তাকে দিন না সেদিকে এগুতে। যে পেশায় সে আগ্রহ প্রকাশ করছে, দিন না তাকে তার মত করে সেই পেশায় এগিয়ে যেতে। দেখুন না, সে অবশ্যই ভালো করবে।

আমার বিশ্বাস এই লেখাটি আমাদের কিছু অভিভাবক মহলে বিশেষ সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাড়াবে। তথাপি একজন কেরিয়ারিষ্ট হিসেবে আমার অনুরোধ করার প্রয়োজন বলে আমি অনুরোধ করলাম। আশাকরি অভিভাবক মহল বিয়ষটি ভেবে দেখবেন।

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

ব্যবস্থাপক, (এইচ আর এন্ড এডমিন)

আকিজ প্রুপ

নিউজবাংলা/একে